স্টার্টআপের টার্গেট মার্কেট খুঁজে বের করবেন কিভাবে?

Contents
স্টার্টআপের টার্গেট মার্কেট খুঁজে বের করবেন কিভাবে?
মনে করুন আপনি আর আপনার এক বন্ধু ট্যুরে যাওয়ার জন্য নানা ব্যাকপ্যাক, জুতা, জামা, সানগ্লাস, প্রয়োজনীয় মেডিসিন কিনে যাত্রা শুরু করলেন।
যাত্রা পথে কান্ট্রি সং শুনে শুনে জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা মুভির মত অনুভূতি আসল আপনাদের মনে। আর কি চাই জীবনে?
প্রায় ঘন্টাখানেক যাত্রার পর আপনাদের সম্বিত ফিরে এল, আরে যাচ্ছি কোথায় আমরা? কোথায় যাব সেটাইতো ঠিক করি নি।
যদি আপনার টার্গেটই না ঠিক করেন, তাহলে আপনার যাত্রার বলতে গেলে পুরোটাই ব্যর্থ। কারণ, যে জায়গায় যাবেন সে জায়গা নিয়ে আগে কিছুটা রিসার্চ করে নিতে হয়- জায়গার আবহাওয়া, খরচ, মানুষের আচরণ, হোটেলের পরিবেশ ও নানাবিধ জিনিস।
আর তা না করে মাঝপথে যদি ঠিক করেন, লাদাখ যাবেন। লাদাখ সম্পর্কে আগে থেকে না জানার জন্য ভারত-চায়নার যুদ্ধে ধরা খেয় গেলেন, চায়না আপনাকে ভারতের গুপচর মনে করে ধরে নিয়ে গেল!!
২০১৭ সালে আমি আর আমার এক বন্ধু প্রায় ১৬ মাস খাটাখাটি করে, অনেক সময়, শ্রম ও অর্থ অপচয় করে শিক্ষামূলক একটি প্ল্যাটফর্ম বানাই। কয়েকটা ইউটিউব ভিডিও দেখে নিজেদের অনেক প্রো লেভেলের ভেবে আসল কাজে নেমে একেবারে কড়া লেভেলের ধরা খাই।
ইনভেস্টরদের কাছে প্রোডাক্ট নিয়ে যাওয়ার পরে তারা বলেন, ‘এতো আপনাদের ফ্যান্টাসির ফল’।
আসলেই তারা সত্য ছিলেন, আমরা আমাদের টার্গেট মার্কেট নিয়ে ভাবি নি। পরে মার্কেট সার্ভে করে দেখি আমাদের প্রোডাক্ট ইউজার ফ্রেন্ডলি না। এটা বাজারে নামলে নিশ্চিতভাবেই ফেইল করত।
আমাদের মত ব্যর্থদের বেশিরভাগই ভাবি যে আমরা একটা জোস প্রোডাক্ট বানাব, সবাই সেটা বিরিয়ানির মত কিনবে।
ওই জোস শব্দটা শুধু আমাদের কাছেই জোস, আমাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও অনুভূতির কাছে জোস।
বাজারে যাদের জন্য বানাচ্ছি তাদের জন্য না। তাই ব্যর্থ হওয়াটা স্বাভাবিক।
৪২% স্টার্টআপ মুখ থুবড়ে পড়ে শুধুমাত্র সঠিক টার্গেট মার্কেটের অভাবে।
কেন আগে মার্কেট টার্গেট ঠিক করা দরকার?
এই বাজারে আপনাকে টিকে থাকতে হলে আপনাকে আগে সম্ভাব্য ক্রেতা, বাজারের আকার, ক্রেতাদের পেইন পয়েন্ট, সঠিক সুযোগ বুঝে ও সঠিক পণ্য বের করতে হবে।
কিন্তু আমি ও আমার বন্ধু করেছি উল্টো। আমরা আগে প্রোডাক্ট বানিয়েছি, এরপর মার্কেটি খুঁজেছি।
একটি সঠিক টার্গেট মার্কেট আপনাকে যা দিতে পারে-
১- মূল বাজারে যাওয়ার আগে ক্রেতাদের ফিডব্যাক আপনার পণ্যকে বা সেবাকে করবে উন্নত
২- আপনার বাজারজাতকরণ কৌশল, ও কিভাবে ক্রেতাদের কাছে আপনার বার্তা পৌছালে তাদের মধ্যে আপনার পণ্য বা সেবা নেয়ার তাড়না কাজ করবে সেটা আপনি খুব সহজে বের করতে পারবেন।
৩- ক্রেতা ধরে রাখার হারও আপনি অনেক বাড়াতে পারবেন।
কিভাবে বের করবেন টার্গেট মার্কেট?
এর জন্য শুধু দরকার ৫ টি প্রশ্ন- Who-What-When-Where-Why
প্রথমেই আসি WHO নিয়ে-
Who সবচেয়ে মজার ও একই সাথে সবচেয়ে কঠিনও। এতে আপনি আপনার ক্রেতাদের ডেমোগ্রাফিক ভিউ পাবেন। এই প্রশ্নটার করার সাথে সাথে আপনি দেখবেন আপনার পণ্য বা সেবা অটোমেটিক্যালি কাস্টোমাইজ হচ্ছে। এই কাস্টোমাইজশনেই আপনি নার্ভাস হয়ে আস্থা হারিয়ে ফেলবেন, আপনার ফ্যান্টাসি থেকে নামার প্রথম পদক্ষেপ এটি।
এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি যা যা পাবেন-
বয়স- লিঙ্গ- এলাকা- পারবিবারিক বা বৈবাহিক অবস্থা- শিক্ষাগত যোগ্যতা- পেশা- ও আয়।
এই প্রশ্নের উত্তর কোথা থেকে পাবেন?
ওয়েব এ্যানালিটিক- সোশাল মিডিয়া– এ্যাড টুল – সার্ভে আর ইন্টারভিউ – এ্যাকাডেমিক ও ব্যবসায়িক গবেষণা
What?
আমার মতে Who এর চেয়ে What এর গুরুত্ব অনেক বেশি-
ধরুন- ১) কোন লিঙ্গের ক্রেতা বাজারে বেশি? ২) কি কারণে মানুষ অমুক পণ্যটি কিনে?
উপরে দুইটি প্রশ্নের মধ্যে ২ নংটি আপনাকে বেশি সাহায্য করবে।
এখানে আপনি যেসব প্রশ্ন করবেন-
১- সম্ভাব্য ক্রেতাদের প্রয়োজন ও সমস্যা কি? কোন পণ্য ও সেবা দিলে তাদের সমস্যার সমাধান হবে?
২- বিশেষ কোন কারণে তারা হতাশায় ভুগছেম, হতাশার কারণ কি মূল্য- ডেলিভারি?- নাকি কাস্টোমার কেয়ারের কেয়ারলেসনেস?
৩- ঠিক কি কারণে তারা পণ্য কিনে? আর কোন কোন কারণ তাদের অজানা যা আপনি তাদের জানাতে পারেন?
এই উত্তরগুলো যেখান থেকে পাবেন-
১- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আপনার পন্য বা সেবা সম্পর্কিত ফোরাম
২- মিটআপ- অনলাইন বা ফিজিক্যাল
৩- জরিপ ও সাক্ষাৎকার
৪- অ্যাকাডেমিক ও ব্যবসায়িক গবেষণা
When-
১- কখন তারা পণ্য ও সেবার মাধ্যমে সমাধান চায়? ঠিক কোন সময়।
২- কোন সময়ে বা সিজনে আপনি ক্রেতার কাছে আগাবেন?
৩- কোন নির্দিষ্ট সময়- মাস বা বছরে কি তারা পণ্য বা সেবা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
৪- নির্দিষ্ট কোন সময়ে তারা পণ্য বা সেবা নেয় না।
১-যেখান থেকে উত্তর পাবেন-
২-গুগল ট্রেন্ড, রেডিট ও বিভিন্ন এস ই ও টুলস
৩-ওয়েব অ্যানালিটিক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিজ্ঞাপন টুলস,
৪- জরিপ ও সাক্ষাৎকার।
Buy Google Adwords Ads
Where-
মার্কেটিং এর ৪ টা P। এই চারটা P হল Product, Price, Promotion, and Place.
Place জিনিসটা এখন আর বাস্তবে দেখা যায় এমন কোন জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এখন প্লেস হল কোথায় তারা তাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে।
এখন মানুষ গুগল, ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফোরাম, রিভিউ প্ল্যাটফর্ম, এমনকি বন্ধুদের মেসেজ করে। এটাই এখন প্লেস।
উপরিউক্ত কোন জায়গায় মানুষ সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করবে এটা আপনাকে ধরে আগাতে হবে।
১- কোথায় সম্ভাব্য ক্রেতারা তাদের পণ্য ও সেবা খুঁজে বের করে।
২- তারা কি সেখানে রিভিউ অ্যানালাইসিস করে? বা কোন সমস্যার সমাধানে পৌছানোর আগে কোন কোন জিনিস নিয়ে গবেষনা করে?
৩- তারা কাদের কথামত পণ্য কিনে? বন্ধু-বান্ধব, ইনফ্লুয়েন্সার, এক্সাপার্ট নাকি অন্য কেউ? তারা কোন কোন বিশেষ মানুষকে অনুসরণ করে।
এই প্রশ্নের উত্তর কোথা থেকে পাবেন?
ওয়েব এ্যানালিটিক- সোশাল মিডিয়া- এ্যাড টুল
সার্ভে আর ইন্টারভিউ
এ্যাকাডেমিক ও ব্যবসায়িক গবেষণা
Why-
আপনার আগের সব প্রশ্নের উত্তর ব্যর্থ হলেও Why আপনাকে ঠিকই বাঁচিয়ে দিবে। পণ্য মডিফাই হয় সবচেয়ে বেশি এই Why তে। এই প্রশ্নের উত্তর কঠিন হলেও, পণ্য বা সেবার নেয়ার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে Why।
১- কেন আপনার টার্গেট মার্কেটের অমুক পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান বর্তমানে নেই?
২- এতদিন ধরে কেন সমস্যার সমাধান হয় নি?
৩- আপনার প্রতিযোগীদের পণ্য বা সেবা না নিয়ে কেন সম্ভাব্য ক্রেতারা আপনার পণ্য বা সেবা নিবে?
৪- কেন আপনার পণ্য বা সেবা নিবে? আপনার পণ্য কি তাদের চেয়ে সস্ত বা সুবিধাজনক।
যেখানে প্রশ্নের উত্তর পাবেন-
১- সাক্ষাৎকার ও জরিপ
২- প্রতিযোগি বিশ্লেষণ
৩- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
৪- ফোরাম ও প্রশ্ন-উত্তরের প্ল্যাটফর্ম
শেষ কথা হল, এই তাত্ত্বিক আলোচনা নিয়ে আপনি আপনার টার্গেট মার্কেট নিয়ে বড়জোর হালকা ধারণা পাবেন আমার মতে। এই প্রশ্নগুলো আপনি আপনার মত করে সাজিয়ে নিয়ে আপনার পণ্য ও সেবার উপর প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাবেন বলে আমি মনে করি।
আপনার যদি মনে হয় অমুক এলাকার চায়ের দোকান থেকে আপনি বিশেষ কোন তথ্য পাবেন, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করুন। এই তাত্ত্বিক আলোচনার চেয়ে বেশি ভাল ফল তিনি দিতে পারবেন হয়ত।