Bangla ArticlesBusiness IdeaBusiness TipsMixed ArticlesNews

চায়না শাসন করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ

Contents

চায়না শাসন করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ

চায়নার শিল্প বিপ্লবটা শুরু হয়েছিল বড়জোর ৪০ বছর আগে। বর্তমানে তারা যে গতিতে লম্বা রেসের ঘোড়ার মত দৌড়াচ্ছে, তাতে একে মিরাকেল না বলে কোন উপায় নেই। এই লম্বা রেসের ঘোড়া আজ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতির দিকে এগিয়ে থাকলেও, চায়না এখনো তাদের প্রযুক্তি জগতে বিশাল একটা ফারাক রেখে দিয়েছে বটে।

সত্যি কথা বলতে চায়নার অত ঠেকাও পড়েনি বাই ডিফল্ট প্রযুক্তির দৌড়ে এগিয়ে থাকতে, তারা চায় আমেরিকা আর অন্যান্য পশ্চিমা দেশের ঘাড়ের উপর ভর করে উপরে উঠতে। অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলে Leapfrog।

বাজার দখল করার জন্য তারা এখন বাজি ধরছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপরে। আর সামনের প্রযুক্তির বাজারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যে তুরুপের তাস এতে কোন সন্দেহ নেই।

আগামী ২০২১ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার দাঁড়াবে প্রায় ২.৯ ট্রিলিয়ন ডলার, আর একই সাথে এই বাজার বাস্তবের ৬.২ বিলিয়ন কর্মঘন্টা যোগ করবে। যা কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দিবে বহুগুন।

পি ডাব্লিউ সির মতে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার হবে ১৫.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। আর Accenture এর মতে২০৩৫ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কর্মীদের ক্ষমতা বাড়াবে ৪০ শতাংশেরও বেশি, এবং সেই সাথে প্রবৃদ্ধিও পাল্লা দিয়ে বাড়বে প্রায় দ্বিগুন।

কিন্তু চায়নার কাছে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেয়ে এই দৌড়ে এগিয়ে থাকাটাই বেশি অর্থবহ বলে মনে হচ্ছে।
২০১৭ সালে চায়নার স্টেইট কাউন্সিল “New Generation Artificial Intelligence Development Plan,” নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহন করে ২০৩০ সালের মধ্যে  আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ক্লাসে প্রথম হওয়ার জন্য।

এই পরিকল্পনায় বলা হয়,

“promote the birth of new technologies, new products, new industries, new formats, and new models, trigger significant changes in economic structure, profoundly change human production, lifestyle and thinking mode, and achieve the remarkable jump of social productivity as a whole.”

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতাই এর মূল কারণ-

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রচার, প্রসার, ও গ্রহনযোগ্যতা বর্তমানে এতটাই ব্যাপক যে এটিকে এখন আর বিলাসিতা হিসেবে গণ্য করা হয় না। ব্যবসায়ের ভাষায় এখন একে GPT বা General Purpose of Technology বলা হয়।

GPT হলো, এমন এক প্রযুক্তি যা সবখানে গ্রহনযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য। সহজ ভাষায় সেই আঠার শতকের বাষ্পীয় ইঞ্জিন, ইলেক্ট্রিসিটি ও কম্পিউটার যেমন কমন ছিল, ঠিক একইভাবে কৃত্রিম বুদ্দিমত্তাও এখন আর কোন নতুন জিনিস নয়। আমাদের শয়নে-স্বপনেও এর প্রভাব রয়েছে। এই প্রযুক্তি নাটকীয়ভাবে আমাদের মান্ধাতা আমলের চিন্তা-চেতনা ও জীবন ব্যবস্থা নিমিশেই বদলে দিয়েছে।

প্রতিটি যুগের প্রাযুক্তিক অগ্রগতি ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে জিপিটি বলতে গেলে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাষ্পীয় ইঞ্জিন, ইলেক্ট্রিসিটি, ও কম্পিউটার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পবিল্পবের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে, তা আমরা একটু চারপাশে চোখ বুলালেই দেখতে পাই। এতে আমাদের পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের অর্থ-সম্পদ, গড় আয়ু, উৎপাদনশীলতা ও জীবনমান বাড়িয়েছে আলোর গতিতে।

এতে আমাদের দিনকে দিন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি প্রত্যাশার পারদ চরচর করে বেড়ে চলেছে, নিত্যদিনের কাজকর্মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন এক প্রভাব রেখে চলেছে, যা আমাদের খালি চোখে ধরা না পড়লেও এর প্রভাব অনেক বিশাল। যা আমরা টের পাব কদিন পরে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একজন রেডিওলজিস্টকেও হার মানিয়ে দিয়েছে মেডিকেল রিপোর্ট তৈরিতে, দুবাইতে পুলিশের রিপোর্ট বা মামলা করতে এখন আর মানুষের দরকার নেই বললেই চলে, (দুবাইয়ের অগ্রগতি নিয়ে আমার একটি লেখা কমেন্টে দিলাম), চাইনিজ থেকে ইংরেজি অনুবাদ বা ভাইস ভার্সা, কেড়ে নিয়েছে অনুবাদকের চাকরি, চালক ছাড়া গাড়ি, কোটি কোটি টাকার লেনদেনে সামান্য জালিয়াতি ধরে ফেলছে অনায়াসে, আর আছে সন্ত্রাসবাদ দমন। প্রতিদিনের কর্মতালিকায় এসবকে সামান্যই বলা যায়।

তাই চায়না কেন নিজেদের শাসন ধরে রাখতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে শাসন করবে না, এ কথা আর বলার জো নেই।

বিগত শতাব্দী ও শতকের প্রাযুক্তিক অগ্রগতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রথমদিকে একটি প্রযুক্তি মানুষ বা সময় ঠিকমত গ্রহন করে নি্‌, তাই পরিবর্তনও আসে নি। একটি প্রযুক্তিকে অর্থনীতির সাথে যোগ করার পরে, যতক্ষন না পর্যন্ত সেটি দিয়ে নাটকীয় পরিবর্তন বা ইতিবাচক ফল এসেছে ততক্ষণ তা আলোর মুখ দেখেনি। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও এর বাইরে নয়।

গত ৬০ টি বসন্ত পার হবার পর, এবং ব্যাপক গবেষণার পর বলাই যায়, এই শতকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিশ্চিতভাবেই আলোর মুখ দেখবে। এবং, তা অর্থনীতিতে গুরুত্ত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

এত কিছুর পরেও এই বিপ্লবের জন্য দরকার মেধাবীদের পৃষ্ঠপোষণ, সঠিক পরিবেশ, বিশাল অংকের বিনিয়োগ, সঠিক নীতিমালা, নিরাপদ অবকাঠামো, এবং উপযুক্ত পরিবেশ, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া যায়।

কেন চায়না এই দৌড়ে এগিয়ে আছে?

চায়না শিল্প বিপ্লবের দৌড়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও চায়নার স্টেইট কাউন্সিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনীও ছাড় দিবে না এটা নিশ্চিত। এর জন্য যারা যে তিনটি বিষয়ের উপর নজর দিচ্ছে তা হল-

নতুন অবকাঠামো তৈরি-

বর্তমান সময়ে ডেইটা বা তথ্যের অবাধ প্রবাহে একটি নতুন টার্মের বাজারে খুব কাটতি, তা হল বিগ ডেইটা। আপনার আমার সবার তথ্যই এই কাজে লাগে, সোজা কথায় আমরাই পণ্য। এ নিয়ে সামনে বিস্তারিত লিখব ইন শা আল্লাহ। যাই হোক, এই বিগ ডেইটা হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জ্বালানী। এই তথ্যের অবাধ প্রবাহ যত বেশি হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তত বাড়বে।

তাই এই বিশাল তথ্যর ভান্ডারকে পোষা প্রানীর মত করে রাখার জন্য চায়না ফাইভ জি, ক্লাউড কম্পিউটিং, ডেইটা সেন্টার, এবং আইও টিতে প্রচুর পরিমাণ টাকা ঢালছে। আগামী ৩ বছরে তাদের বিনিয়োগের টার্গেট প্রায় ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার শুধুমাত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য।

এ ছাড়াও চায়নার রয়েছে নিজস্ব বিকল্প সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেমন উই চ্যাট, কিউ কিউ, এবং উইবো। এতে রয়েছে কয়েকশ মিলিয়ন এ্যাক্টিভ ইউজার। আর এরই সাথে চায়নার নমনীয় তথ্য নিরাপত্তা আইন তাদের আরো বেশি পরিমাণ তথ্য এনে দিচ্ছে, যা অন্য দেশগুলোর চিন্তার কারণ।

শিক্ষা ব্যবস্থা-

Tech Savvy, বা প্রযুক্তিমনা নয়, চায়না কাজ করছে, AI Savvy প্রজন্ম গড়ে তোলা নিয়ে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সেরা হবার জন্য চায়নাতে কোন ভাল বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও, বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা হয়, সেখানে চাইনিজদের রাজত্ব। চাইনিজদের রয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক আন্তর্জাতিক ছাত্র, প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার, এবং এই সংখ্যা হচ্ছে তাদের মোট বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ।

তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়া ছাত্রদের সংখ্যা সেই হিসেবে আরো কম। তাই ২০১৮ সালে চায়নার শিক্ষা মন্ত্রনালয় শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপরে ৩৫ টি মেজর কোর্স চালু করেছে। আর প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রদেরও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পাঠ দেয়া শুরুর করেছে বহু আগে।

চাইনিজ উদ্যোক্তা গঠনের প্রক্রিয়া ও পরিবেশ-

কাই-ফু-লি তার বই AI Superpowers এ খুব সুন্দরভাবেই বর্ণনা করেছেন, কিভাবে চাইনিজরা আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির নকল করে তাদের দেশের সবচেয়ে পোড় খাওয়া উদ্যাক্তাদের তৈরি করেছে।

“Survival […] requires relentlessly iterating products, controlling costs, executing flawlessly, generating positive PR, raising money at exaggerated valuations, and seeking ways to build a robust business “moat” to keep the [other] copycats out.”

চায়নার উদারমনা ভর্তুকি নীতির কারণে উদ্যাক্তারা সবচেয়ে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি পাচ্ছে খুব সহজে। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কয়েক ডজন উন্নয়ন এলাকা প্রতিষ্ঠা, ইনকিউবেটর ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তৈরীর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

তবে এটা বলা বাতুলতা হবে না যে এখনো আমেরিকাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে, চায়নাও সেই দৌড়ে পিছিয়ে নেই। চায়নার বর্তমান কার্যক্রম দেখে বোঝাই যাচ্ছে, সামনের দিনে হয়ত চায়না আমেরিকার সাথে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ করবে, অথবা আমেরিকাকে পেছনে ফেলে দিবে।

কভিড-১৯ এ আমেরিকার বেহাল দশা। তাতে ২০৩০ সালে চায়নার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে বিশ্ব শাসন করবে তা এখনই প্রতীয়মান। যদি চায়না আমেরিকাকে কৃত্রিম বুদ্দিমত্তার রেসে হারাতে পারে, তাহলে হয়ত আমরা আমেরিকার পতন ও চায়নার উত্থান দেখব।

তাই, বিশ্ব রাজনীতির পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে, সেটা হয়ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই দিবে।

বিঃদ্রঃ Tech Makki এর রয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিশেষ ইন-হাউজ এক্সপার্ট টিম। আপনার ফেসবুক মার্কেটিং, ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং , ভিডিও এডিটিং, ও ইউটিউব মনিটাইজ রিকোয়ার্মেন্ট ফিলাপ করার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার সেবায় আমাদের ইনবক্স ২৪*৭ খোলা

source – marketing clew

Abu Bakkar

Content Writer and Author in Amazon Book. You can learn more from this blog. So follow & check regular content.

Related Articles

Back to top button
error: Alert: Content is protected !!