সংখ্যার এই জটিল ভাষা আমাদের অবচেতন মনে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে

Contents
সংখ্যার এই জটিল ভাষা আমাদের অবচেতন মনে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে
রেস্টুরেন্টে গিয়ে আমরা মেনুর উপরে দাম লেখা দেখি 499 বা Four Hundred Ninety-Nine কেন? চাইলেতো তারা 499.00 ও লিখতে পারত। আবার, আমি যখন কোথাও ক্যাশব্যাক পাব, তখন কেন 100 না লিখে 100.00 লেখা হয়?
মার্কেটিং এর সংখ্যার খেলাটা আমাদের মনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মার্কেটাররা যে আমাদের মনের সাথে সংখ্যা নিয়ে খেলছেন তা আমরা ঘুনাক্ষরেও বুঝি না। শুভংকরের ফাঁকি ধরতে পারলেও আমরা অতটা গা করি না। তবে, এর বাইরেও রয়েছে সংখ্যার এক অদৃশ্য খেলা।
বিজ্ঞাপনে পণ্যে সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকলে তা বিজ্ঞাপনকে অনেক আকর্ষণীয় করে। এর মূল ব্যপার হল তথ্য যা আমাদের মনের উপর অনেক গভীর প্রভাব ফেলে। এজন্যই বিজ্ঞাপনগুলোতে আমরা অমুক-তমুক ইন্সটিটিউশনের তথ্য পাই, বিশেষ করে সাংখ্যিক, যা পণ্যের গুনাগুনকে ভ্যালিডিটি দেয়। আর পাঠককে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
কপিরাইটাররা বিজ্ঞাপনের কপি লিখার আগে এই সাংখ্যিক তথ্য নিয়ে অনেক গবেষণা করে, তবেই তারা ফাইনাল কপিতে হাত দেয়।
যেমন ১০০০ আমেরিকান ডাক্তারের মতে ‘X’ নামক টুথপেস্টই দাঁতের জন্য উপযুক্ত।
পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ, পণ্যের ভেতরকার ইনফো, দাম এবং ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি সবই সংখ্যায় লেখা হয়, যা ক্রেতার মনে উৎসাহ সৃষ্টি করে।
So, whenever you get the chance to substantiate your claims with numbers — take it.
সংখ্যার এই ক্ষমতাটা আমরা কম বেশি সবাই জানি, তবে এর পেছনে আরো গল্প রয়েছে। সংখ্যার এই জটিল ভাষা আমাদের অবচেতন মনে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে।
মানুষ তাদের মন ও হৃদয় দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই সিদ্ধান্ত আবার মগজ দিয়ে জাস্টিফাই করে, , হোক ভাল কিংবা মন্দ। আপনি মানুষের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াকে একবার ধরে ফেলতে পারলেই আপনার বিজ্ঞাপন অনেক আকর্ষণীয় হবে। শুধু বিজ্ঞাপন না, দৈনন্দিন জীবনেও কাজে লাগাতে পারবেন।
নিচের কিছু উদাহরণ পড়ি-
–১ বছরে প্রতি মাসে মাত্র ৮৩৩ টাকা বিনিয়োগ করে খুব সহজেই আয় করুন ১০ হাজার টাকা।
–১ বছরে, ১২ মাস ধরে মাত্র আটশত তেত্রিশ টাকা বিনিয়োগ করে খুব সহজেই আয় করুন ১০০০০.০০ টাকা।
আপনি বাকিদের মত হলে, খুব সহজেই বলবেন ১ নং উদাহরণটি সহজ ও ২ নং টি কঠিন ও সেকেলে। সে যাই হোক।, এ নিয়ে পরে আসছি।
যখন আপনি কোন সংখ্যাকে বড় করে দেখাতে চাইলে, সংখ্যার সাথে দশমিক দিয়ে শূন্য যোগ করবেন, আর ছোট দেখাতে চাইলে শূন্য ও দশমিক বাদ দিবেন।
এ ছাড়াও ১ টাকা কমিয়ে ৯৯৯৯ বানাতে পারেন, এতে বেশিরভাগ ক্রেতার মনে ওই ৯ সংখ্যাটাই ঘুরবে।
ঠিক এই কারণেই বড়বড় রেস্টুরেন্টের মালিকরা তাদের মেনুতে ডলার অথবা টাকার চিহ্ন, দশমিক বাদ দিয়ে মেনুর প্রাইসটা চোখের জন্য এতটাই আরামদায়ক রাখে যে ক্ষুধার্ত ক্রেতা দামের দিকে দেখে ক্ষুধার জ্বালায় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
Buy Facebook Page Likes
‘আশি টাকার বিরিয়ানি’ নিঃসন্দেহে ‘৮০ টাকার বিরিয়ানি’ ও ‘৮০.০০ টাকার বিরিয়ানির’ চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হবার সম্ভাবনা রাখে।
উপরের বিনিয়োগের উদাহরণে আপনি হলে কোন প্যাকেজে বিনিয়োগ করতেন? আমি হলে ১০০০০.০০ এর করতাম।
বিজ্ঞাপন দেয়ার আগে সিদ্ধান্ত নিন, কোন দিকটাতে আপনি ট্রাফিক চাচ্ছেন, কোন দিকটি আপনার পণ্যের জন্য ক্ষতিকর, আর কোন দিকটি আপনার পণ্যের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
বিজ্ঞাপন লেখার সময় আপনার পণ্যকে নখদর্পনে রাখুন, সংখ্যার এই জটিল বিন্যাসের মানে এই না যে আপনি ক্রেতার সাথে চালাকি করছেন, বরং এটা ভাবুন যে আপনি অনভিজ্ঞ ক্রেতাকে আপনার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সবচেয়ে সেরা পণ্যটি বাছাই করতে সাহায্য করছেন। ‘
সময়ের খেলা-
সময়ের ব্যপারে আমি ১ বছর ও ১২ মাস এই দুটোকে প্রাধান্য দিই। ক্ষেত্র অনুসারে ১ বছর ও ১২ মাস কথাটি ব্যবহার করি। ১ বছর সমান ১২ মাস আমরা সবাই জানি। ১২ মাস স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতার মনে লম্বা সময়ের ধারণা নিয়ে আসে।
যেমন, এই পণ্য কিনলে আপনি পাবেন প্রায় ১২ মাসের ওয়ারেন্টি।
এখন, সেই প্রোডাক্ট ওয়ারেন্টির জন্য নিয়ে আসার পর যদি দেখি প্রোডাক্ট ঠিক করে সার্ভিস দিতে ১২ মাস লাগবে, আমি তখন ক্রেতাকে বলব, স্যার মাত্র ১ বছরেই পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্খিত সেবা।
সংখ্যার এই ব্যপারটিকে ইংরেজিতে Unitosity বলে। আমাদের অদ্ভুত মন একেকসময় সংখ্যাকে একেকভাবে ধরে নেয়। এবং মার্কেটারদের ঘাম ছুটতে বাকি থাকে না। ব্যপারগুলো ক্রমাগত মানুষের আচরণের সাথে পরিবর্তিত হয়।
সময়ের একককে ভেঙে উপস্থাপন করলে আমাদের মন দ্রুতই তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা শুরু করে।
যেমন, এক সপ্তাহ অবশ্যই এক দিনের চেয়ে বড়। এই দুটো সময়ের মধ্যে বড় করে উপস্থাপন করতে চাইলে দিনের চেয়ে সপ্তাহ বেশি যুক্তিযুক্ত।
যেমন-
এই কোর্স করার জন্য আপনি পাচ্ছেন দুই সপ্তাহ সময়, এর মধ্যে আকাঙ্খিত ফল না পেলে আপনি পাচ্ছেন মানি ব্যাক গ্যারান্টি
এবং,
এই কোর্স করার জন্য আপনি পাচ্ছেন চৌদ্দ দিন সময়, এর মধ্যে না আকাঙ্খিত ফল না পেলে আপনি পাচ্ছেন মানি ব্যাক গ্যারান্টি।
বেশিরভাগ লোকের কাছেই ১ নং উদাহরণেই বেশি সময় পাচ্ছে বলে মনে হবে।
আশা করি তফাৎটা ধরতে পেরেছেন, আরেকটু বলি, আপনাকে একটা দ্বীপে নির্বাসনে থাকতে বললে, আপনি মাসের পর মাস থাকবেন, নাকি বছরের পর বছর? সারাজীবন থাকতে হলেও, মাস কথাটি আপনার মনে স্বস্তি দিবে।
উপরের সব লেখার মানে এই না যে, ‘এটাই সাইন্স’। আপনার বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে আপনি কীভাবে সংখ্যা ব্যবহার করবেন।
আরো চাই আরো!
মানুষ স্বভাবতই বেশি চায়। সবকিছুতেই বেশি চাই তার। আমি জানি না মানুষ কতটুকু মিনিমালিস্ট হতে পারে সমাজে, কিন্তু কষ্টের আয় করার টাকাটা সবাইই চায় একটু বেশি হোক।
তাই আপনার হাতে মাল-মশলা কম থাকলেও মানুষকে বেশি দেয়ার চেষ্টা করেন।
ধরুন আপনি, বিরিয়ানি বেঁচেন, আশি টাকায় এক প্লেট আখনী বিরিয়ানি।
আপনার প্রতিযোগিও আশি টাকায় এক প্লেট একই রেসিপিতে একই স্বাদের বিরিয়ানি বিক্রি করে।
তো আপনার প্রতিযোগির কাস্টোমার বাগাবেন কিভাবে? একে ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি বলে, এই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে চাইলে ৬ মাসের একটা কোর্স বানানো সম্ভব। যাই হোক সে নিয়ে পড়ে লিখব।
তো, আপনি চাইলে আপনার বিজ্ঞাপনে লিখতে পারেন,
হাটহাজারির কোন প্রকার রাসায়নিক সার ছাড়া, কৃষকের হাতে সন্তানের মত লালিত পালিত করার পর উৎপাদিত মরিচ, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী অমুক বাবুর্চির সিক্রেট রেসিপির মেজবানী মশলার অসাধারণ মিশ্রন, ঘানি ভাঙা সরিষার তেল, শান্তির হাটের ঘাস খাওয়া দেশী গরুর সকালের টাটকা মাংস দিয়ে একদম ঘরোয়া পরিবেশে মোটা চালের গরম ধোয়া ওঠা আখনি…
দেখুন, দুইজনে একই উপাদান ব্যবহার করার পরেও প্রথম দেখায় আপনি কার কাছে যাবেন?
নিজেকে প্রশ্ন করুন।
আমাদের পেমেন্ট মেথড সেট করার সময় আমরা কিছুটা ছাড় দিই। ধরুন, আপনি আমাদের কাছে একটি সার্ভিস নিয়ে এলেন যাতে আপনি ১২০০ টাকা প্রতি বছর আপনি চার্জ করেন।
১২০০ টাকা হয়ত অনেকের জন্য অনেক টাকা, তখন আপনার উচিৎ হবে আপনার সার্ভিসকে ব্রেক ডাউন করে প্রতি মাসে ৯৭ টাকা সাবস্ক্রিপশনে সেটা করে দেয়া।
হয়ত ৩৬ টাকা আপনি লস দিলেন। কিন্তু ১১৬৪ টাকা একেবারে কিছু না থাকার চেয়ে অনেক ভাল। অন্তত ০ অংক চেয়ে।
শিরোনামের ব্যবহার-
১- সবসময় সংখ্যা শিরোনামের শুরুতে ব্যবহার করবেন। যেমন- 9 Things That Can Make You Confident.
Nine Things… এভাবে লিখবেন না।
২- সংখ্যা শুরুতেই ব্যবহার করুন। লেখার মাঝে নয়।
৩- কন্টেন্টে ১-১০ এর মধ্যে সংখ্যা ব্যবহার করুন। দরকার হলে সাবহেডে কন্টেন্ট ভেঙ্গে লিখুন।
‘৪১ টি উপায়ে অনলাইনে আয় করতে পারেন’- ৪১ টি পয়েন্ট পড়তে পাঠকের বয়েই গেল।
৪- বিজোড় সংখ্যা ব্যবহার করুন। ১০ টি উপায়ে অনলাইনে আয় করুন, না লিখে ১১ টি বা ৯ টি লিখতে পারেন। এটি কন্টেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়।
৫- ৭ এবং ৯ সংখ্যা মানুষের মনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। এ দুটোর মিশ্রন দারুন কাজে দেয়।
যেমন আপনি পণ্যের মূল্য ১৯৯ বা ১৭৭ না রেখে ১৯৭ বা ১৭৯ রাখতে পারেন। একবার করেই দেখুন কেমন ফল পান।
ছোটবেলায় পড়া শতকিয়া-ধারাপাত যে এভাবে কাজে লেগে যাবে, তা কখনো বুঝি নি।
শেষে সংখ্যা নিয়ে একটি কথাই বলতে চাই There are two rules in life, 1- Never give out all the information.