৪ বছরে প্রায় ৪৬০ টি ফেসবুক এড থেকে শেখা ৪ টি লেসন !

Contents
৪ বছরে প্রায় ৪৬০ টি ফেসবুক এড থেকে শেখা ৪ টি লেসন !
আমি ৪ বছর থেকে ফেসবুক এড দেখছি আর স্টাডি করছি । একটি এড প্রথম পয়েন্ট একজন গ্রাহকের জন্য কিন্তু কোম্পানির জন্য শেষ স্টেপ । আপনি সব থেকে সেরা এড তৈরি করতে পারেন তবে আপনি যা সেল করছেন কেউ যদি ক্রয় না করে তাহলে আপনার এড কাজে আসবে না । পেইড ট্রাফিক লাস্ট স্টেপ যদি অন্যান্য কাস্তমার জার্নি আপনার কাজ না করে থাকে তবে এড ও কাজ করবে না ।
এড অন্যদের মত । যদি আপনার কাস্তমার জার্নি খুব ভাল হয়ে থাকে আর এড তেমন না হয় । তাহলে আপনি তেমন গ্রাহক পাবেন না যতটুকু পাওয়া উচিৎ ছিল ।
আমার ৪ বছরে শেখা ৪ টি লেসন ।
১- পেইড ট্রাফিকে শুধুমাত্র বাজেট সব কিছু না সেটা বুঝা
আমাদের অধিকাংশ মনে করে থাকি বাজেট যত বাড়াবো বিক্রয় তত বাড়বে ।
যেমন এখন আমি প্রতিদিন ১০০ ডলার খরচ করে ১০০ টি প্রোডাক্ট সেল করতে পারছি তার মানে ১ ডলারে ১ টি প্রোডাক্ট সেল করতে পারছি । তাহলে আমি যদি প্রত্যেক দিন ২০০ ডলার খরচ করি তাহলে ২০০ টি প্রোডাক্ট সেল করতে পারব গড়ে ।
দুর্ভাগ্যবশত বেশির ভাগ সময় তা হয় না বিশেষ করে ফেসবুকে । বাজেট বাড়িয়ে ফেসবুক কে বলছেন আপনার এড বেশী মানুষের কাছে শো করতে ।
ফেসবুক এবং গুগল এর মত প্লাটফর্ম এর এলগরিদম কাজ করে থাকে এই সব এর ভিত্তিতে ……
- আপনার বাজেট
- আপনার টার্গেট
- আপনার প্রত্যাশা এবং ফলাফল
- এই ছাড়া অনেক কিছু
- এই সব কিছু আপনাকে সাহায্য করে থাকে সম্ভাবনার সব টুকু দিতে ।
শুধু আপনি মেশিন কে বেশী ডলার দিবেন তাতেই সে গ্যারান্টি দিবে যে অনুপাতে বাজেট বাড়াবেন সে অনুপাতে আপনার সেল বাড়াবে তা নয় ।
বিশেষ করে আপনি যদি কম মানুষ কে টার্গেট করেন ।
হয়তো সে খানে যথেষ্ট পরিমাণ মানুষ নাই যারা আপনার প্রোডাক্ট ক্রয় করার সম্ভাবনা বেশী রাখে শুধু তাদেরকে ফেসবুক আপনার এড দেখাবে ।
মনে রাখবেন আমরা মানুষের নিকট এড দিচ্ছি কোন রোবট এর কাছে নয় । আপনার টার্গেট মানুষ দেখল তবে ক্রয় করল না ।
আপনি বেশী বাজেট বাড়ানোর অর্থ এই নয় যে আপনার সেই হারে বিক্রয় ও বেড়ে যাবে ।
ফেসবুক এবং গুগল টাকার মেশিন না যে আপনি যে অনুপাতে খরচ বাড়াবেন সেই অনুপাতে আপনি প্রফিত করবেন ।
তার অর্থ এই নয় যে বাজেট বাড়াবেন না বাড়াবেন তবে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে ।
যেমন :
- বিভিন্ন ধরনের এড কপি টেস্ট করা
- নতুন অফার বা নতুন বিক্রয় সিস্টেম করা
- নতুন টার্গেট দিয়ে আপনার মার্কেটে অধিক মানুষের নিকট এড দেখান
আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনার টার্গেট মার্কেট কে এক পুকুরের মাছ ।
আর একই হুক , একই সেলিং সিস্টেম , একই অফার , একই টার্গেট এর পথ প্রয়োগ করতে থাকেন তাহলে যদি ও বাজেট বাড়াচ্ছেন তা সত্তেও আপনি আপনার টার্গেট মার্কেট ছোট থেকে আর ও ছোট করছেন ।
বাজেট বাড়ানোর সাথে সাথে সব কিছু কে ভিন্ন ভিন্ন পথে ইউজ করে আপনার মার্কেট ও বাড়াতে হবে ।
বিভিন্ন ধরনের এড কপি টেস্ট করা
হয়ত আপনার বর্তমান এড কপি আপনার টার্গেট মার্কেট এর একটি প্রব্লেম সমাধান করছে ফলে যারা এই ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড তারা ক্রয় করছে । তাই আপনার এড কপি কে ঢেলে আবার নতুন করে সাজান যার ফলে অন্য ফিলিং আসবে , অন্য স্ট্যাটাস আসবে , অন্য গল্প বলবে তাহলে অন্য টাইপ এর মানুষের কাছে তা ভাল লাগবে আর সে জন্যই তারা আপনার প্রোডাক্ট ক্রয় করবে ।
নতুন অফার বা নতুন বিক্রয় সিস্টেম করা
কেউ Lead Magnets দেখে কেউ Facebook Ad Templates দেখে কেউ Blog Post Templates দেখে আকৃষ্ট হয় । কেউ টেক্সট পড়তে ভালবাসে আবার কেউ অডিও শুনতে ভালবাসে কেউ আবার ভিডিও দেখতে ভালবাসে । তাই বাজেট বাড়ানোর সাথে সাথে এই অপশন গুলিও বাড়াতে হবে তাহলেই আপনার বিক্রয় বাড়তে পারে ।
নতুন টার্গেট দিয়ে আপনার মার্কেটে অধিক মানুষের নিকট এড দেখান
যখন দেখছেন বর্তমান টার্গেট এ কাজ হচ্ছে তখন সিমিলার কিছু নতুন টার্গেট করতে পারেন বা কাছাকাছি যা আছে সেটার নতুন করে টার্গেট করতে পারেন । আবার লুকলাইক গ্রাহক নতুন করে টার্গেট করতে পারেন আবার ইন্টারেস্ট এর আইটেম বাড়িয়ে আপনার টার্গেট বাড়াতে পারেন । এই ভাবে নতুন নতুন টার্গেট আবিস্কার করতেই থাকেন তাহলে আপনার বাজেট বাড়ানো কাজে আসবে ।
২- আপনি যে ভাবে আপনার টার্গেট মার্কেট রিসার্চ করেন বা বর্ণনা দেন তা বদলে ফেলেন ।
যখন জানতে চাওয়া হয় তখন অধিকাংশ মার্কেটিয়ার বা বিজনেসার তাদের সম্ভাব্য গ্রাহকের বর্ণনা দেয়া হয় এই ভাবে …………………
- মহিলা যারা ঢাকায় বাস করে
- টিন এজ ১৬-১৮ বছর
- যুবক যারা মাসে ২০০০০- ৩০০০০ টাকা আয় করে
আরও অনেক কিছু
আমরা মানুষ হিসেবে বর্ণনা করে থাকি বয়স , লিঙ্গ , আয় ইত্তাদি বিচার করে ।
মার্কেটিয়ার হিসাবে ২০১৮ সালে আমরা অনেক কিছু দিয়ে বর্ণনা করতে পারি যেমন ” ভাল লাগা ”
” কামনা বাসনা ”
- আম খেতে ভালবাসে
- হিমু পড়ে
- নতুন গাড়ী কিনবে
- ঝকঝকে দাঁত চাই
- খেলা দেখতে মাঠে যায়
- গ্রামীণ ফোনের ডিরেক্টর অফ মার্কেটিং
- মাশরাফির ফ্যান
গ্রাহকের মনে বাস করুন তারা কি পড়ে , কি ক্রয় করে , বয়স লিঙ্গ আয় ছাড়া আরও বেশী কিছু তে মনোযোগী হন ।
এই সমস্ত কিছু আপনাকে টার্গেট করতে আরও বেশী নির্দিষ্ট করে দিবে ।
আপনার মার্কেটে গ্রাহক কে টার্গেট করতে ফেসবুকে তারা কিসের ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড তা খুজে বের করুন ।
যারা নির্দিষ্ট প্রবলেম সল্ভ করার জন্য গুগল করে যার সমাধান আপনার প্রোডাক্ট দিয়ে থাকে তাদের কে টার্গেট করুন ।
এর সাথে সাথে বিভিন্ন ইভেন্ট টার্গেট করুন যাতে আপনার সেল হয় ।
যেম
- চাকুরী বদলান
- নতুন বাচ্চা
- বিবাহ
- প্রেম
- এসি গরমে
- ঈদ
এই সব ইভেন্ট আপনার গ্রাহক কে ক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে । তাছাড়া আপনার টার্গেট এর সিদ্ধান্ত নিতে সহজ করে দেয় ।
ধরা যাক আমরা স্যুট সেল করে থাকি তাহলে কোন কোন ইভেন্ট আমদের সেল বাড়াতে সাহায্য করবে ।
হতে পারে
- স্টাডি কমপ্লিট
- নতুন জব
- নতুন পেশাজীবী যার ওয়ারড্রব দরকার
- ২০-৩০ যারা নতুন বিয়ে করতে পারে
- জবে প্রমোশন বিজনেস ভ্রমনের জন্য লাগতে পারে
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল আপনার টার্গেট গ্রাহক কের পারসোনালিটি জানা ।
আপনার মার্কেট রিসার্চ করুন
- ইভেন্ট যোগ দিন যে গুলিতে তারা যাই
- অনলাইন ফোরামে তাদের কথা বার্তা পড়ুন
- আপনার মার্কেট এর প্রোডাক্ট এর রিভিউ পড়ুন
আপনি আপনার গ্রাহকের মনের মাঝে বিচরণ করলে টার্গেট করা নিয়ে আর ভাবতে হবে না ।
৩ – এড তৈরি তে আরও সৃজনশীল হতে হবে
আমি বিশ্বাস করি বিশেষ করে এই ২০১৮ সালে আপনার ইমেজ বা ভিডিও তৈরিতে লুক ভাল আনতে হবে এবং ফিল করাতে বাধ্য করতে হবে ।
আপনার সৃজনশীল দুই ভাবে কাজ করবে
- আপনার হুক এর ভিজুয়াল উপস্থাপনা আপনার প্রান্তিক গ্রাহকের মনে যে ছবি আঁকতে চান
- আপনার ব্র্যান্ড কে বিশ্বাস যোগ্য করে তুলতে কলা কৌশল
গ্রাহক এই ২০১৮ সালে অনলাইনে কি মানের ইমেজ বা ভিডিও দেখতে চাই সেটা মাথায় রাখতে হবে
গ্রাফিক ডিজাইনে আর ভিডিও মেকিং এ খরচ করুন যেমনটি আপনার ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্ট দেখতে হওয়া উচিৎ ।
তবে অবশ্যয় সৃজনশীল হতে হবে বলিউড নায়িকা দের ইমেজ আর বিড়াল এর ভাইরাল হওয়া ভিডিও দিলে চলবে না মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ।
আপনার এড এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র দৃষ্টি আকর্ষণ না । ঠিক ঠিক লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ , এবং একটি ম্যাসেজ চিত্রিত করা , তারপরে যদি মানুষের নিকট যৌক্তিক মনে হয় তাহলে ক্রয় করবে ।
মনে রাখতে হবে কোন ম্যাসেজ আপনি দিচ্ছেন আপনার এডে এবং কত ভালভাবে তা চিত্রিত করতে পারছেন ।
সেটাই এখন অনেক বড় ব্যাপার আগের যে কোন সময় এর তুলনায় ।
৪- মার্কেটিং এর মিডিয়াম ছাড়া কিছুই বদলায় নাই
এই চার বছরে একটি ব্যাপার শিখেছি তাহলো মার্কেটিং এর কলা কৌশল কিছুই বদলায় নাই ।
স্টাডি করুন আর চর্চা করুন ভাল মার্কেটিয়ার হতে ।
আমরা এক জায়ান্ট এর ঘাড়ের উপর ভর করে আছি যে শত বছর থেকে মানুষের নিকট মার্কেটিং করে আসছে আমরা শুধু নতুন প্রযুক্তি আর মাধ্যম ইউজ করছি ।
একই হাত তবে অবশ্যয় তাতে নতুন মাধ্যম থাকতে হবে ।
পরবর্তী ” ট্রাফিক সোর্স কি হবে ” ?
যে খানে অধিকাংশ মানুষ একত্রিত হবে , অনেক ইউজার থাকবে আর থাকবে ইউজার দের ডাটা কালেক্ট করার অনেক মাধ্যম সেটাই হবে মার্কেটিয়ার দের স্বর্ণের খনি ।
আর সেই জন্যই ফেসবুক মেসেঞ্জার মার্কেটিং ফিউচার মার্কেটিং হবে ( সেটা নিয়ে লিখব আরেকদিন আপনাদেরকে পেলে সাথে )
২ বিলিয়ন নিয়মিত ইউজার আর অনেক ডাটা ফেসবুক প্লাটফর্ম থেকে ।
ফেসবুক মেসেঞ্জার হতে পারে আরও বেশি কার্যকারী মাধ্যম আপনার ব্র্যান্ড এর জন্য ।
তবে কক্ষনো ভুলবেন না আমরা সর্বদা ” মানব সম্প্রদায় ” এর নিকট মার্কেটিং করি ।
মর্মস্পর্শী অফার বেছে নিন , উপকারিতা উম্মচন করুন ( ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে , যাতে করে ভিন্ন ভিন্ন টাইপ এর মানুষ আকৃষ্ট হয় ) সেই ম্যাসেজ সঠিক মানুষের নিকট পৌঁছে দিন ।
২০১৮ সাল শুধুই আপনার ।