AdviceBangla ArticlesBusiness TipsE-Commerce Tips & tricks

শূন্য হাতে শুরু এখন সফল উদ্যোক্তা

শূন্য হাতে শুরু, এখন সফল উদ্যোক্তা

ঘটনাটা ৩১ বছর আগের। এক তরুণী জীবিকার তাগিদে কাজ নেন পোশাক কারখানায়। মাননিয়ন্ত্রণকর্মী িহসেবে ৮০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু। কাজে যোগ দিয়ে কিছু সময় যেতেই নিজের ভেতরই যেন পরিবর্তনের ডাক পেলেন—এভাবে হবে না। এগোতে হলে শিখতে হবে মেশিনের কাজ। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ধরলেন মেশিন। কাজের দক্ষতায় পেতে থাকেন পদোন্নতি। এবার সচল হলো স্বপ্নও। পোক্ত হয়ে একসময় কাজ ছেড়ে নিজেই গড়লেন প্রতিষ্ঠান। শূন্য হাতে শুরু করে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর নাম বেবি হাসান। বিএস অ্যাপারেল নামের একটি বায়িং হাউসের কর্ণধার তিনি।

নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে সফল উদ্যোক্তাদের একজন হয়েছেন বেবি হাসান। তাঁর অধীনেই কাজ করছেন প্রায় অর্ধশত কর্মী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানির কাজ করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। বছরে লেনদেন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।

সফল ব্যবসায়ী হবেন, এমন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মজীবন শুরু করেননি বেবি। অনেকের মতো তাঁরও শুরুটা জীবিকার তাগিদেই। এসএসসি পাস করার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে ১৯৮১ সালে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। বিয়ের পরবর্তী বছর জন্ম নেয় কন্যাসন্তান। স্বামীর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তাই সংসারে কিছুটা স্বস্তি আনতে নিজেই চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে পরিবারের কেউ উৎসাহ না দেখালেও পরে অবশ্য মেনে নিয়েছেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পোশাক কারখানায় কাজ করেন বেবি। একসময় উৎপাদন পরিচালকের দায়িত্বও পান।

সে সময়গুলোর কথা উঠতেই বেবি হাসানের চেহারায় দৃঢ়তা। বললেন, ‘দিনে ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করতাম। সকাল আটটায় কাজ শুরু হতো, ফিরতাম রাত ১০টার দিকে। কোনো দিন কাজে অবহেলা করিনি। শুরুতে অনেক দূর যেতে হবে এমন লক্ষ্য ছিল না, তবে যখন কাজটাকে ভালোবেসে ফেললাম, তখন স্থির করলাম একটা পর্যায়ে যেতে হবে।’

নব্বইয়ে দশকের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠান বদলে একটি বায়িং হাউসে যোগ দেন বেবি। পাশাপাশি টুকটাক এ–সংক্রান্ত ব্যবসাও শুরু করেন। ২০০০ সালে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের একটি সংগঠনের সদস্য হন তিনি। হাতে তেমন নগদ টাকা ছিল না, তাই দ্বারস্থ হন ব্যাংকের। দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে হালিশহর কে ব্লকে ‘বিতনু’ নামের একটি বুটিকের শোরুম খোলেন। ওই বছরই চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইম্যান এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন (উই)। ওই সংগঠনের সদস্য হন বেবি। ২০০০ সালের শেষের দিকে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ জন অংশ নেন কলকাতার একটি কুটিরশিল্প মেলায়। সেখানে গিয়েই চোখ খুলে যায় তাঁর। তিনি বলেন, ‘ওই মেলায় গিয়েই ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। কী করে জানি সেদিনই ব্যবসার পোকা ঢুকে যায় মাথায়। মনস্থির করি, আমাকে ব্যবসায় সফল হতে হবে।’

২০০২ সালে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একটি বায়িং হাউস দাঁড় করানো শুরু করেন। এরপর ২০০৯ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন বিএস অ্যাপারেল নামের পৃথক বায়িং হাউস। বছর বছর এই প্রতিষ্ঠানের কলেবর বাড়ছে। মা বেবি হাসানের সঙ্গে ছেলে সালাহউদ্দিন চৌধুরীও সম্প্রতি ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন।
প্রায় শূন্য থেকে আজকের অবস্থানে আসার কৃতিত্বের ভাগ বেবি হাসান দিতে চান আরও দুজন নারীকে। একজন তাঁর মা ফরিদা খাতুন, অন্যজন ব্যবসায়ী নেতা মনোয়ারা হাকিম আলী। ১৯৯৮ সালে অসুস্থতায় ভুগে বেবি হাসানের মা মারা যান। মেয়ের চূড়ান্ত সাফল্য মা দেখে যেতে পারেননি, এই কষ্টই এখন তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে। বেবি হাসানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে হলেও তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে।

চাকরির পাশাপাশি সংসারের দেখভাল করতে হয়েছে। ফলে অবসর বলে কিছু ছিল না। কিন্তু তাতে দুঃখ নেই বেবির। তিনি বলেন, চাকরি বা ব্যবসা মেয়েদের জন্য খুব কঠিন, এমনটি কখনো মনে হয়নি। চেষ্টা থাকলে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন।’ এসব কথা যখন বলছিলেন, তখন বেবির মুখে সাফল্যর তৃপ্তির হাসি। বললেন, ‘পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাঁদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করো। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য, চাকরি করব না, চাকরি দেব।’

 

Shirley Setia

A graduate student from the University of Auckland and marketing and publicity intern at Auckland Council, Setia took part in a contest conducted by T-Series. Her YouTube entry was recorded in her bedroom while she was wearing pajamas. This earned her the sobriquet "Pyjama popstar" by the New Zealand Herald.

Related Articles

Back to top button
error: Alert: Content is protected !!