ফ্রিলান্সিং কি,কাদের জন্য এবং কি ভাবে করব?

Contents
ফ্রিলান্সিং কি,কাদের জন্য এবং কি ভাবে করব?
ফ্রিলান্সিং কি?
ফ্রিলান্সিং হচ্ছে অনলাইনে কাজ করে অর্থ উপার্জন । এখন প্রশ্ন হচ্ছে অনলাইনে কি কাজ করবেন ? আপনি যা পারেন তাই করবেন । আপনি যদি ডিজাইন করতে পারেন তাহলে ডিজাইন করতে পারেন, আর্র্টিকাল লেখতে পারেন, বিভিন্ন ধরনের সার্ভে করতে পারেন, ডাটা এনট্রি করতে পারেন, মোট কথা আপনি যা পারেন তা করেই অনলাইনে অর্থ উপার্জন করতে পারেন । আপনি যদি কিছু না ও করতে পারেন, তাহলেও আপনি কেবল মুভি দেখে অর্থ উপার্জন করতে পারেন । এবার আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে কে দেবে আপনাকে কাজ ? পশ্চিমা উন্নত দেশ গুলোতে যেখানে শ্রমের পারিশ্রমিক অনেক বেশি, সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গ এত বেশি টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে আগ্রহি হন না । তখন তারা চান অনুন্নত দেশের দক্ষ লোকজন দিয়ে কম পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাদের এই কাজ গুলো করিয়ে নিতে । আর আমাদের দেশের মত অনুন্নত দেশের দক্ষ লোকজন কম টাকার বিনিময়ে তাদের এই কাজ গুলো করে দেয় । আর কাজ প্রদান করা থেকে শুরু করে কাজ সম্পাদন, কাজ হস্তান্তর, টাকা প্রদান এই সমস্ত কিছুই হয়ে থাকে অনলাইনে । আর এভাবে অনলাইনে কাজ করে অর্থ উপার্জন করাকে বলা হয় ফ্রিলান্সিং ।
ফ্রিলান্সিং কেন করবেন?
ফ্রিল্যান্সিং কেন সহজ ?
ফ্রিলান্সার হতে গেলে কি কি লাগবে?
কাজ কিভাবে শিখবেন?
কাজ শিখার পর কি করবেন?
কাদের জন্য এই মুক্ত-পেশা?
– যাদের অতিরিক্ত লোভ নেই।
– যারা কাজ শেখার ধৈর্য রাখে।
– যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার মত কমিউনিকেশন জানে।
– যারা শর্টকাটে টাকা আয় করতে চায় না।
– যাদের জীবনে কিছু করার প্রবল ইচ্ছে আছে।
– যারা সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করতে চায়।
– যাদের শেখার প্রবণতা আছে।
যারা এ পথে না আসলে ভাল করবেনঃ
- যারা কাজের চেয়ে টাকাকে মূল্যায়ন করেন।
- যারা সহজে আয়ের পথ খুঁজছেন।
- যারা চাকরির বা অন্য পেশার পাশাপাশি সাইড ইনকাম হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং কে ভাবছেন।
- যারা মনে করছেন শেখা শুরুর ১৫দিন – ১ মাসের মধ্যেই কারিকারি টাকা আয় করবেন।
- যারা ফ্রিল্যান্সিং ট্রেইনিং সেন্টারের চটকদার বিজ্ঞাপন ‘ঘরে বসে লাখ টাকা’ দেখে এই পেশার জন্য আগ্রহী হয়েছন।
- যারা ফ্রিল্যান্সিং কে খুব সহজ ভাবেন।
কিভাবে আসবেন এ পথে?
- আগে জানুন এ খাতে কোন কোন ফিল্ড আছে। (রেফারেন্সে লিংক)
- তারপর ভেবে দেখুন আপনার এখন যে ব্যাকগ্রাউন্ড, স্কিল এবং ইন্টারেস্ট; সেটার সাথে কোন ফিল্ড মিলে যায়।
- বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে ঐ ফিল্ড গুলোর এখন পোস্ট করা জব গুলো ঘেঁটে দেখুন, বুঝার চেষ্টা করুন এ ধরণের কাজে কি কি স্কিল লাগে।
- ঠিক করার পর এবার চেষ্টা করুন কোথা থেকে শেখা যায়, অনলাইনেই শেখা যায় ধৈর্য থাকলে। এদেশে প্রথম সারির ফ্রিল্যান্সাররা নিজে নিজেই শিখে সফল।
- কারও কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন এই সময়ে এসে, স্কিল্ড হওয়ার পর পরামর্শ নিন কিভাবে ফিল্ডে নামা যায়। প্রথমেই ‘ভাই, ইনকাম করার সহজ পথ বলেন’ বলে কাউকে ইরিটেট করবেন না।
- চেষ্টা করতে থাকেন, ফেইল করলে ভুল গুলো শুধরে আবার ট্রাই করেন। যে কাজে আপনাকে এক্সেপ্ট করেনি, সে কাজ নিজেই করুন, সেম্পল প্রজেক্ট হিসেবে প্র্যাক্টিসও হবে, পোর্টফোলিও হবে।
- ধৈর্য ধরে নিজেকে আরও স্কিল্ড বানানোর জন্যে নতুন নতুন কিছু স্টাডি করুন।
কিছু ভুল ধারণাঃ
- ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং শেখা যায়!
- ৫ হাজার টাকা দিয়ে ২ মাস কোর্স করলেই হাজার টাকা আয় করা যায়!
- ট্রেইনিং সেন্টারে গেলেই সফল হওয়া যায়!
- CAPTCHA এন্ট্রি, ফেইক লাইক, পিটিসি, BET365 এগুলো ফ্রিল্যান্সিং!
- ফ্রিল্যান্সিং করা খুব সহজ, দিনে ২ ঘন্টা সময় দিলেই হাজার টাকা!
- ফ্রিল্যান্সিং মানে SEO.
- ফ্রিল্যান্সিং আইটি ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য, বিজনেস, নন-আইটি বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছেলে মেয়েদের জন্য না।
- ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আইটি ওরিয়েন্টেড ফিল্ডে কাজ করতে হবে।
কিছু অপ্রকাশিত তথ্যঃ
- দেশে ৬ লক্ষ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং অথবা অনলাইন প্রফেশনাল।
- নাম-সর্বস্ব ট্রেইনিং সেন্টারের সংখ্যা ১১০০০ +
- ট্রেইনিং প্রাপ্ত নাম-সর্বস্ব স্কিল্ড ছেলেমেয়ের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি (এর অর্থ হল ১৪ লক্ষ বেকার, কারণ তারা সত্যিকার অর্থে স্কিল্ড না)।
- নন-আইটি, বিজনেস, ক্রিয়েটিভ, ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই ছাড়া) ব্যাকগ্রাউন্ড এর জন্য কাজের সংখ্যা মোট মার্কেটের ৫৩%।
- আইটি ব্যাকগ্রাউন্ডের বাইরের সবার ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আইটির কাজ শিখতে হবে না, তাদের নিজেদের ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজই আছে মার্কেটে অনেক।
কিছু পরামর্শঃ
- ট্রেইনিং সেন্টার থেকে দূরে থাকুন, নিজে শেখার চেষ্টা করুন।
- ট্রেইনিং সেন্টারে যদি যেতেই হয়, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, ট্রেক রেকর্ড চেক করুন। প্রয়োজনে এই খাতে সফল কারও পরামর্শ নিন।
- অল্প দিনে অনেক টাকা আয় করার কথা যারা বলে তাদের থেকে দূরে থাকুন।
- পুরোদমে ফ্রিল্যান্সিং করবেন, তবে ৩ বছরের বেশি না, এর পর উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা করবেন।
গুরুত্বপূর্ণঃ
ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় যে গুণটা দরকার, তা হল নিজ থেকে বুঝে নেয়ার ক্ষমতা, কাউকে জিজ্ঞাসা করার আগে নিজে সময় দিয়ে মাথা খাটিয়ে নেট ঘেঁটে শিখে নেয়ার চেষ্টা। কারণ যে আপনাকে পরামর্শ দিতে পারবে, অবশ্যই সে নিজে অনেক ব্যস্ত, তাকে ছোট খাটো সব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তাকে বিরক্ত করা ছাড়া কোন কাজ হবেনা। কিন্তু আপনি যদি নেট ঘেঁটে কিছু শেখার-জানার দক্ষতা রাখেন, আপনি যে কোন ফিল্ড নিয়ে কাজ শুরু করে নিমিষেই সফল হতে পারবেন।
এই গাইডলাইনের লেখক নিজে ৮ বছর ধরে ফ্রিল্যান্সিং জগতে আছে, কিন্তু মূল ধারায় ফ্রিল্যান্সিং করেছেন ৫ বছর, এর পর উদ্যোক্তা হয়েছেন। যেকোন ফ্রিল্যান্সারই দক্ষতার সাথে ৩-৪ বছর ফ্রিল্যান্সিং করে ঐ ফিল্ডেই নিজের কোম্পানি শুরু করতে পারে। সেই একই কাজ কোম্পানি হিসেবে বড় টিম নিয়ে করতে পারে।
লেখক ফ্রিল্যান্সিং ইন্ডাস্ট্রির একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক এবং কমিউনিটি এক্টিভিস্ট, তাই গাইডলাইন হিসেবে ইন্ডাস্ট্রির সব ফিল্ড নিয়ে আলোচনা করতে পেরেছেন। এর অর্থ এই নয় যে তিনি প্রত্যেক ফিল্ডে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। সব ফিল্ড নিয়ে এডভান্স লেভেলের পরামর্শ দেয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়, তাই এ ধরণের প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।