ফেসবুক সাইবার সিকিউরিটি & কমনসেন্স

Contents
ফেসবুক সাইবার সিকিউরিটি & কমনসেন্স
শুন্য থেকে কি ফেসবুক কি হ্যাক করা সম্ভব?
– না, একটা আইডি লিংক ধরিয়ে দিলেই তরতর করে আপনার আইডিতে ঢুকে যাবে এমন কাবিল লোককে সিক্স ডিজিট ডলার স্যালারি দিয়ে ফেসবুক গোগল জামাই আদর করে রাখে, তারা সুইস ব্যাঙ্ক থেকে টাকা গাপ করে পিজ্জ্বা খায়। তাদের টাইম নেই আপনার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে বিকাশে পনেরশ টাকা চাওয়ার। সুতরাং আইডি হ্যাক করে ফেলবে এমন হুমকিতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
তাহলে আইডি হ্যাক হয় কিভাবে?
– একটা ফেসবুক একাউন্টে এক্সেস নিতে হলে যে বিষয়গুলোতে এক্সেস থাকতে হয়, ফেসবুক একাউন্টে ব্যবহৃত ইমেইল/ইমেইল খোলা যে ফোন নাম্বার দিয়ে সেই নাম্বার /ফেসবুক লগিন দেয়া আছে এমন ডিভাইস (ল্যাপটপ,ফোন,ট্যাব ইত্যাদি) /একাউন্টে যে ফোন নাম্বার দেয়া আছে সেই ফোন নাম্বার। এসবের যে কোনো একটাতে মিনিমাম এক্সেস থাকতেই হবে কেও যদি আপনার আইডি হ্যাক বা এক্সেস নিতে চায়।
আপনার ফোন এলাকার সব মানুষ হাতায়, বয়ফ্রেন্ডকে পাসওয়ার্ড দিয়েছেন, কোন জনমে কার ফোন নাম্বার দিয়ে মেইল খুলেছেন আপনি নিজেও জানেন না। পুরাতন তৃতীয় নাম্বার এক্স বিএফ, চাচাত ভাইয়ের বন্ধুর ছোট ভাইয়ের বোনের দুলাভাই একাউন্ট খুলে দিয়েছিল সেটাই চালাচ্ছেন কোনো সিকিউরিটির কথা চিন্তাভাবনা না করেই!- এহেন কর্মকান্ডে জুকা মামার নিজেরও সাধ্য নেই আপনার আইডি রক্ষা করার।
এর বাইরে কি অন্য কোনো ভাবে আইডি হ্যাক হয়?
– সম্ভব। ইউজুয়ালি ফিসিং লিংক দিয়ে, কি লগার-ব্যবহার করে।
ফিসিং সাইট কি?
– সোজা বাংলায় মাছ ধরা। যে অকাজের ধান্দা করছে সে বড়শি দিবে ইনবক্সে, আপনি মাছ। সাধারন যা হয় তা হলো, সাইট গুলো হুবহু ফেসবুকের আদলে বানানো হয়। আপনাকে ইনবক্সে কেও একটা লিংক দিয়ে বললো এখানে এই মজার জিনিস আছে কিংবা বললো “হায় হায়, এখানে তো তোমার ন্যুড পিক রিপোর্ট করো গিয়ে”। আপনি ঢুকে দেখলেন ফেসবুকের লগিন পেজের মত একটা পেজ, ভাবলেন ব্রাউজার থেকে মনে হয় লগ আউট হয়ে গেছে, আবার লগিন দিলেন। এতে করে আপনার পাসোয়ার্ড চলে গেলো হ্যাকারের হাতে। সুতরাং না বুঝে সাইবার স্পেসে কোথাও পাসোয়ার্ড ইনপুট দেয়া, ফেসবুক আইডি লগিন দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
কিছুদিন পর পর ট্রেন্ড বের হয় বাবুর নাম কি হবে, আপনার বিড়ালের বাচ্চার কয়টা শিং থাকবে,পোষা মুরগ আগামি মাসে কটা ডিম পারবে, আপনি কি কুটিপতি হবে না লাখপতি হবেন, এই এপস গুলো থেকে যতটা পারেন দূরে থাকুন। অন্তত ক্লিক করার আগে দেখে নিন কি কি ইনফরমেশন চাচ্ছে।
কি-লগার কি?
-সহজে বলতে গেলে চোরা পথ, ওপেনে এভেইলেবল না। আর বানাতে পারে এক্সপার্টরাই। কি লগার আপনার ডিভাইসে ইন্সটল দিয়ে দিলে আপনার ডিভাইসের এক্টিভিটি স্ক্রিনশট আকারে বা অন্য উপায়ে হ্যাকারের কাছে চলে যাবে। ধরুন আপনি ফেসবুকে লগিন দেয়ার জন্য ইউজার নেম পাসোয়ার্ড টাইপ করলেন। আপনার অজান্তে সেসব তথ্য ফরোয়ার্ড হয়ে যাবে হ্যাকারের কাছে। কি লগার ইন্সটল দিতে হলে আপনার ডিভাইসে ম্যানুয়াল এক্সেস থাকতে হবে সুতরাং এলাকার সবার কাছে হ্যান্ডসেট, ল্যাপটপ বর্গা দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
এখন কথা হলো এত সব কিছু আমাদের জানার দরকার কি?
– ফেসবুক শুধু মাত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, এটাকে বর্তমানে আমাদের ঘর বাড়ি বানিয়ে ফেলেছি। লাইফের অর্ধেক রিয়েল লাইফ, অর্ধেক ফেসবুক, ইন্সটাতে.
সুতরাং একটা আইডি হ্যাক হলে সেখান থেকে ব্লাকমেইল, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট, সামাজিকভাবে হ্যারাস সবই হচ্ছে এখন। বিশেষ করে আমাদের সামাজিক পরিস্থিতির আলোকে সব থেকে বেশি বিপদে পড়েন মেয়েরা। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের লিগাল স্টেপ নিতে পারেন না তারা। আর সাইবার স্পেসের মত ভয়াবহ জায়গায় যে কোনো ধরনের সমস্যায় তো আরো পারেন না। সুতরাং ফেসবুক সিকিউরিটি নিয়ে সবার থেকে মেয়েদের সচেতন হওয়া আবশ্যিক।
ছোট্ট কিছু উদাহরন দেই,
১. বয়ফ্রেন্ডে, পার্টনারের সাথে অন্তঃরঙ্গ চ্যাট, ছবি আদান হয় ইনবক্সে? আইডি বেহাত হয়ে গেলো মানে সেই ছবি গুলো দিয়ে ব্লাকমেইল, টাকা চাওয়া, ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান, আপনার ফ্রেন্ডস ফ্যামিলি মেম্বারদের কাছে ছবি পাঠিয়ে দেয়া বা দেয়ার হুমকি দেয়া এহেন কোনো অকাজ নেই যা করে না পাবলিক। এসবের ভয়াবহতা ভুক্তভোগী হওয়ার আগেই অনুধাবন করা উচিত। এক্স বয়ফ্রেন্ড ন্যুড ছবি ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করার কেস অহরহ। সোনার বাংলা ভেবে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার কারন নেই, একটা ভুল স্টেপ শাপদে ভরা বাংলা দেখতে পাবেন।
২. আপনার ছবি দিয়ে ফেক আইডি খুলা হচ্ছে, আইডি খোলার আগ পর্যন্ত হয়ত ভাবতে পারেন ফেক আইডি এ আর কি। কিন্তু ফেসবুক আইডি দিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রীকে গালি দিয়ে পোস্ট দিলো কিংবা ধর্মীয় উস্কানিমূলক কর্মকান্ড চালাবে, একবার ভাবুন তো এর ভয়াবয়হতা কোথায় গিয়ে পৌছাবে? কিংবা আপনার নাম ছবি দিয়ে একাউন্ট খুলে আপনার বন্ধুদের কাছে টাকা চাইলো, আপনার অফিসের কলিগকে কুপ্রস্তাব দিলো। একটা ক্লিকে হাজার মানুষকে মেসেজ দেয়া যাবে। ক্যাচুয়ালি কোথায় গিয়ে পৌছাবে একবার চিন্তা করুন।
মেয়ে হলে আপনার নাম ছবি ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে আইডি খুলে ন্যুড ছবি পোস্ট করলো, চটির আসল বসালো।
*এধরনের ঘটনা কি ঘটতে পারে?
-পারে না, ঘটছে প্রতিনিয়ত। হাজারে নয় সংখ্যাটা লাখে লাখে।
সমাধানঃ
-ফেসবুকের প্রতিটি স্টেপের সিকিউরিটি অপশন, লগিন এপ্রোভাল অন রাখুন, আনপ্রেডিক্টিবল পাসোয়ার্ড ব্যবহার করুন। ময়নাপাখি জানপাখির নাম, মর্জিনা১৯৯৭ এই টাইপের পাসোয়ার্ড দিয়ে আর কত!! ট্রাস্টেড কন্ট্যাক্ট দিয়ে রাখুন যেন যে কোনো সমস্যায় সাথে সাথে রিকভার করা যায়।
ফেসবুকের সব কটা সিকিউরিটি অপশনের সর্বোত্তম ব্যবহার করুন।
বয়ফ্রেন্ড, গার্ল্ফ্রেন্ড পার্টনার যার সাথে যে সম্পর্কই থাকুক সেসব সাইবার স্পেসে জমা রাখা থেকে বিরত থাকুন। খোদার দোহাই লাগে ইনবক্সে ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করবেন না। একটা জান পাখি ময়না পাখি কেঁদে কেটে একাকার হলেও সাইবার স্পেসে নো ভিডিও নো ছবি, নো পাসোয়ার্ড শেয়ারিং, নো নেভার এভার!
ব্যক্তিগত সম্পর্ক কিভাবে রাখবেন যার যার বিষয় কিন্তু সেটাকে ডিজিটাল ফর্ম্যাট দিয়েছেন তো সারা জনম মাসুল গুনতে হবে কোনো সন্দেহ নেই। Scandal লিখে গোগল করলেই কোটি কোটি প্রেমিক পুরুষের বিশ্বাসের মর্যাদা দেয়ার উদাহরন পেয়ে যাবেন.
এক্ষেত্রে তর্কে মিলবে বস্তু, বিশ্বাসে বিষ!!
– নিজের, পরিবারের বন্ধুবান্ধবের ছবি, চেকিন দেয়া থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকুন। দিলেও সেটার প্রাইভেসি চিন্তা ভাবনা করে দিন। এসব তথ্য শুধু সাইবার জগতে নয় রিয়েল লাইফেও বিপদের সম্ভাবনা থাকে।
-মোবাইলে ব্যক্তিগত ছবি রাখা হতে বিরত থাকুন। মোবাইল ছিনতাই হলে লোটা কম্বল সব যাবে। ব্যক্তিগত ছবি ভিডিও রাখার খুব ইচ্ছে হলে আলাদা হার্ড ড্রাইভে রেখে তালাবদ্ধ করে রাখুন।
– আইডিতে যে মেইল & ফোন নাম্বার দেয়া আছে সেসব অনলি মি করে রাখুন। স্কুল কলেজ, বাপ চাচা মামা ভাই বোন সবার সাইনবোর্ড ঝুলালেও সাবধানে ঝুলান। আইডিতে ব্যক্তিগত তথ্য যত কম পাবলিকলি রাখবেন আইডি ক্লোন হয়ে ইজ্জ্বত নিয়ে টানাটানি পড়ার সম্ভাববা তত হ্রাস পাবে।
ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল হোন, স্মার্টফোন স্মার্টলি ব্যবহার করুন, ব্যসিক সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে সচেতন হোন। আর অবশ্যই পরিবার পরিচিত ছোটদেরকে এসব বিষয়ে শিক্ষা দিন। স্মার্টফোনটা যেদিন হাতে তুলে দিচ্ছি সেসবের সেফটি সিকিউরিটির বিষয়ে তাদের জানানোও আমাদের কর্তব্য।