ফেসবুক বিজ্ঞাপনের প্রাথমিক কিছু দিকনির্দেশনা

Contents
ফেসবুক বিজ্ঞাপনের প্রাথমিক কিছু দিকনির্দেশনা
এই গাইডটিতে আমরা ফেসবুক এডভারটাইজিং নিয়ে আলোচনা করব। সাধারণ কিছু মৌলিক বিষয়, যা না জানলেই নয়, তা থেকে শুরু করে আপনার ব্যাবসায়, ব্লগ, ওয়েবসাইট, পণ্য বা সার্ভিসের বিজ্ঞাপনের জন্য ফেসবুক থেকে কীভাবে সরবোচ্চ সুবিধা নেয়া যায় তার পরামর্শও আপনাদের দেয়া হবে। এছাড়াও বাস্তব উদাহরণ ও টিপসের সমন্বয়ে কীভাবে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন তৈরি করতে হয় তার ধাপে ধাপে বিস্তারিত নিয়মাবলী দেয়া হবে যা অনুসরণ করলে আপনারা লাভবান হবেন।
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়ার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা এ সম্পর্কে কোন প্রাথমিক ধারণা যাদের নেই তাদের জন্য এই লেখাটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় কিছু দরকারী তথ্য ও নিয়মাবলী আপনাকে সাহায্য করবে এ বিষয়ে একটি ব্যাপক ও বিস্তারিত ধারণা পেতে, যা আপনি বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করে ফলপ্রসূ হতে পারেন।
ফেসবুক যে এখনকার দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট তাতে আমাদের কারোরই কোন সন্দেহ নেই। ধারণা করা হয় যে, ২০১৭ সালে ফেসবুক ব্যাবহারকারীর সংখ্যা ২ বিলিয়ন হয়ে গেছে , যা যে কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার শীর্ষে। প্রথম দিকে শুধু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য তৈরি করা হলেও শুরতেই হার্ভার্ডের অর্ধেক ছাত্র এটি ব্যবহার করা শুরু করে।
পরবর্তীতে খুব দ্রুতই যখন তা হার্ভার্ডের ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে যায়, আমেরিকার নামীদামী অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এটি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠে, যার ফলশ্রুতিতে এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। আর ফেসবুকের আকর্ষণ ও উন্মাদনা এত দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায় যে, এটি তখনকার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট মাই স্পেসের জনপ্রিয়তাকে খুব সহজেই গুঁড়িয়ে দেয়।
আজকের দিনে প্রায় সকলেই ফেসবুক ব্যবহার করে, এতে কোন সন্দেহ নেই। সময়ের সাথে সাথে ফেসবুকে যে অনেক পরিবর্তন এসেছে তা আমরা চোখের সামনেই দেখেছি, ফেসবুক বিজ্ঞপন ও এর ব্যতিক্রম নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন কেন ?
একবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেট যুগ শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে। যে কোন কাজে এর কোন বিকল্প নেই এমনকি শিশুদের হাতে হাতে বিভিন্ন গ্যাজেট চলে যাওয়ায় তারাও এখন খুব সহজেই এটি ব্যবহার করতে জানে। সোশ্যাল মিডিয়া বা যে কোন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে এখন প্রায় সকলেই জড়িত, কোন না কোন মাধ্যমে সবারই একটি একাউন্ট আছে।
সামাজিক মাধ্যমে মানুষের এত আগ্রহ স্বভাবতই মার্কেটারদের চোখ এড়ায়নি। খুব দ্রুতই এ মাধ্যমগুলো বিজ্ঞাপনদাতাদের টার্গেটে পরিণত হয়, কেননা অসংখ্য মানুষের মাঝে এখানে বিজ্ঞাপনের প্রচার ও প্রসারের সম্ভাবনা অসীম। ২০০০ সালের পর থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধারণা বেড়ে যাওয়ায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোও তাদের হাত প্রসারিত করে যার ফলশ্রুতিতে তারা মাধ্যমগুলো বিজ্ঞাপনের উপযোগী করে গড়ে তোলায় সচেষ্ট হয়।
প্রথমদিকে মার্কেটাররা নিজেদের মত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিলেও আজকাল এই মাধ্যমগুলোতে মোটাদাগে কিছু ফিচার দেয়া থাকে যা বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য খুবই সহায়ক। এর একটি বড় সুবিধা হল, আপনি আপনার নিজের মত করে বিজ্ঞাপন তৈরি করে এখানে প্রচার করতে পারেন। শুধু তাই না, আপনার টার্গেট গ্রুপ কারা হবে তাও আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন। ফলে আপনি যাদের উদ্দেশ্য করে বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছেন তাদের কাছে খুব সহজেই তা পৌঁছে যায়। সামাজিক মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুকই এ ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ নেয় কারণ বিজ্ঞাপনদাতাদের নিজেদের মত করে বিজ্ঞাপন দেয়ার ফলে সামাজিক মাধ্যমগুলো আবেদন হারাচ্ছিল।
ফেসবুকের বিজ্ঞাপনের ফিচার ও পদ্ধতিগুলো এত অভাবনীয় যে, যে কেউই খুব সহজেই শিখে নিতে পারবে কীভাবে এখানে এড দিতে হয়। আবার, জনপ্রিয়তা বেশি থাকায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেশি। ফলে আপনি সহজেই বেশি সংখ্যক লোকের কাছে আপনার বার্তা পৌঁছে দিতে পারছেন। এই দুটি বিষয়ই ফেসবুক এডভারটাইজিং এর সুবিধাগুলোকে বেশি শক্তিশালী করেছে এবং এর থেকে সর্বোচ্চটুকু নেয়ার সম্ভাবনাও আপনার হাতেই রয়েছে।
তাই ছোটখাট ব্যবসায় থেকে মাঝারি সাইজের এন্টারপ্রাইজ কিংবা বড় বড় কর্পোরেশন; সবাই এখন ফেসবুকেই বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। সুতরাং, আপনার ব্যবসায় যত ছোটই হোক না কেন, কিংবা যত বড়ই হোক না কেন, যে কোন প্রকারের বিজনেস থেকেই ফেসবুকের ভিত্তিতে আপনি খুব সহজেই মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে পারেন। আরও মজার ব্যাপার হল, এক্ষেত্রে আপনার বাজেটও মুখ্য নয়। সীমিত পুঁজি থেকেও আপনি বিজ্ঞাপন দিয়ে অপার সম্ভাবনা ও সাফল্য অর্জন করতে পারেন।
এডভারটাইজিংএর জন্য ফেসবুককেই কেন বেছে নিবেন
ফেসবুকের একটি অনন্য ব্যাপার হল এখানে আপনার যেই প্রোফাইলটি আছে সেটি ব্যবহার করেই আপনি আপনার পেইজটি খুলতে পারছেন। আর যখন আপনার একটি ফেসবুক পেইজ থাকবে তখনই আপনি বিজ্ঞাপনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ফেসবুক থেকে এর সর্বোচ্চ সুবিধা গুলো নিতে পারবেন। অর্থাৎ, ফেসবুক পেইজ আপনার বিজ্ঞাপনকে তরান্বিত করে। আপনার ব্যবসায় কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান বা যে কোন কিছুকেই আপনি এই পেইজের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন সবার সামনে।
এই পেইজে আপনি আপনার বিষয় সংক্রান্ত যে কোন কন্টেন্ট শেয়ার করতে পারেন। এর ফলে এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য মানুষ এই পেইজ থেকেই পেয়ে যাবে। আর এভাবেই আপনার সেবা বা পণ্যের ব্র্যান্ডিং উত্তোরত্তোর বৃদ্ধি পাবে। আপনি যা প্রচার করতে চাইছেন, তা সম্পর্কে যাবতীয় ধারণা আপনার পেইজ থেকেই লোকে জানতে পারবে। ফলে, আপনার ফেইসবুক পেইজটি এক্ষেত্রে মানুষের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার, এই পেইজ থেকেই আপনি ফেসবুকের কিছু বাড়তি অপশন ব্যবহার করে এটিকে একটি ই-কমার্স স্টোরে পরিণত করতে পারেন।
সুতরাং, আপনার প্রতিষ্ঠানকে মানুষের কাছে সবচেয়ে ভালোভাবে তুলে ধরতে ফেসবুক পেইজ একটি অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। এখান থেকে যাবতীয় তথ্য আপনি যেভাবে মানুষকে পৌঁছে দিতে চাচ্ছেন ঠিক সেভাবেই দিতে পারছেন। পণ্যের প্রচারের জন্য যে ধরনের প্রচেষ্টা বা ভাবনা আপনার আছে তার সবকিছুই এই পেইজের মাধ্যমে আপনি বাস্তবে রূপ দিতে পারেন, এখান থেকে আপনার টার্গেট গ্রুপের সাথে আপনি সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে একটি সৌহার্দ্যর্পূর্ণ সম্পর্কও গড়ে তুলতে পারেন।
চলুন তাহলে দেখা যাক, বিজ্ঞাপনের জন্য আপনি ফেসবুককেই কেন বেছে নিবেনঃ
- এটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী
- নির্দিষ্ট গ্রুপকে টার্গেট করার সুবিধা
- এক পেইজের উপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞাপনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যায়
- এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক
- ফেসবুকের রয়েছে একটি চমৎকার বিজ্ঞাপন বান্ধব গঠন
- বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন রকম উপায় বা পদ্ধতির সমাহার এতে আছে
- এর গঠনপ্রণালী বিজ্ঞাপনের জন্য খুবই সহায়ক
- এটি খুব সহজেই ব্যবহারযোগ্য
ফেসবুকের বিজ্ঞাপন পদ্ধতির প্রকারভেদ
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়ার প্রধানত দুটি পদ্ধতি আছে- একটি হল, টাকা দেয়ার মাধ্যমে এডভারটাইজিং আরেকটি হল অরগ্যানিক এডভারটাইজিং। দুটোই খুবই কার্যকরী; তবে, ফ্রী বা অরগ্যানিক এডভারটাইজিং পদ্ধতিতে আপনি আপনার সময়, শ্রম ও মেধা বেশি ব্যয় করতে পারছেন। এর ফলে আপনি ঠিক আপনার মনের মত করে বিজ্ঞাপন বা আপনার কন্টেন্টটি মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছেন।
সহজ কথায়,নিজের পণ্য বা সেবা যা কিছু আপনি বিক্রয় করতে চান না কেন,কিংবা নিজেকে মানুষের কাছে পৌঁছাতে এই পদ্ধতি একটু সময় ও শ্রমসাধ্য। অন্যদিকে, পেইড পদ্ধতি আপনি খুব সহজেই দ্রুততার সাথে সব শুরু করতে পারছেন, তবে অবশ্যই এটাও আপনার মাথায় রাখতে হবে যে, আপনার বিজ্ঞাপনের প্রচার ও প্রসারের উপর নির্ভর করে আপনাকে এর পিছনে খরচও করতে হবে বেশ খানিকটা।
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন প্রচারের এই পদ্ধতি গুলোকে আমরা ভাগ করেছি এ কারণেই যে, পেইড পদ্ধতিতে আপনি ফেসবুকের সাথে একাত্ম হয়ে আপনার উদ্দেশ্যকে আরও সফল করতে পারছেন অন্যদিকে ফ্রী পদ্ধতিতে আপনি নিজের পছন্দমতো বিজ্ঞাপন বা কন্টেন্ট তৈরি করে তা লোকের কাছে পৌঁছে দিতে পারছেন।
পেইড অপশনে ফেসবুক যে অফারগুলো দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলঃ
- পেইজের লাইক বৃদ্ধি করা
- পোস্টকে বেশি দর্শকের সামনে নিয়ে আসা
- ওয়েবসাইটে ক্লিকের সংখ্যা বাড়ানো
- ভিডিও বুস্ট করে বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে নিয়ে আসা
- অ্যাপ বুস্ট করা
- অ্যাপ ভিত্তিক কার্যকলাপ বুস্ট করা
- বুস্টের মাধ্যমে ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করা, অর্থাৎ আপনার পেইজকে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করা
অন্যদিকে, ফ্রী এডভারটাইজিং এ যা আপনাকে করতে হয়ঃ
- ম্যানুয়ালি ফ্রেন্ডস লিস্টের বন্ধুদের পেইজে লাইক দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ করা
- নিয়মিত পেইজ শেয়ার করা
- গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করে পেইজে পোস্ট করা
- ডিসকাশন বা কোন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পেইজ থেকে জনসংযোগ করা
- একই ধরণের ফেসবুক গ্রুপের সদস্য হয়ে পেইজের মার্কেটিং করা
- নিজের এড একাউন্ট তৈরি করা
সবার আগে আপনার যা করতে হবে, তা হল, নিজের এড একাউন্ট তৈরি করা। আপনার ফেসবুক পেজটিতে যেয়ে দেখুন, বামদিকে সবার উপরে একটি সেকশন আছে, ‘অ্যাড নিউ’; এখানে আপনি একটি অপশন পাবেন ‘এড একাউন্টস’। এখান থেকেই আপনি আপনার এড একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন; সবার আগে যা করতে হবে তা হল বিলিং ইনফরমেশন তৈরি করা। অর্থাৎ, ফেসবুককে আপনার একটি বৈধ বিল প্রদানের উৎসের কথা এখানে উল্লেখ করতে হবে যেখান থেকে আপনি আপনার বিল ফেসবুককে প্রদান করবেন।
এড একাউন্টস অপশনে যেয়ে একাউন্টটির একটি নাম প্রদান করুন যেন আপনি বুঝতে পারেন কোন পেইজের জন্য একাউন্টটি খুলেছেন। এছাড়াও এখানে যা যা তথ্যাবলি পূরণ করার জন্য খালি ঘর দেয়া থাকবে তা সঠিকভাবে পূরণ করুন। অবশ্যই এটা নিশ্চিত করবেন যে, বিলিং তথ্য পূরণের জন্য আপনি সঠিক মুদ্রার নাম ব্যাবহার করেছেন। একবার সেভ করে ফেলার পর আপনি কোন তথ্য ভুল দিলে তা শুধরাতে পারবেন না। তাই খেয়াল রাখবেন যে, আপনার পূরণ করা প্রতিটি তথ্যই সঠিক।
সব তথ্য পুরণ করা শেষ হলে সেভ অপশনে ক্লিক করার পর আপনার বিলিং ইনফরমেশন পূর্ণ হয়ে গেল। এবার আপনি বিলিং এর আন্ডারে কোন পদ্ধতিতে টাকা প্রদান করবেন তা নিশ্চিত করুন;ক্রেডিট কার্ড, পেপ্যাল কিংবা কুপন ইত্যাদি নানারকম অপশন দেয়া থাকবে। যেহেতু, পেপ্যাল এখনো আসেনি এবং স্টার্টার হওয়ায় কুপনও আপনার কাছে নেই, তাই ক্রেডিট কার্ড দিয়েই আপনার কাজ চালাতে হবে। এখানে আপনার ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পূরণ করে আগাতে হবে।
পরবর্তীতে যখনই আপনি কোন এড তৈরি করবেন, তখন প্রতিটি এডের নিচেই আপনি বিলিং এড্রেস দেখতে পাবেন, সেখান থেকে আপনি প্রয়োজন হলে এড্রেসটি বদলাতে পারবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপনের জন্য যখন আপনি ফেসবুককে টাকা প্রদান করবেন, ফেসবুক আপনার দেয়া একাউন্ট থেকে প্রযোজ্য অংকটি কেটে রাখার মত বাজেট আছে কিনা তা দেখে এডটি তৈরি করে প্রচার শুরু করে দিবে।
বিজ্ঞাপনের মেয়াদ শেষ হবার পরই কেবল আপনার একাউন্ট থেকে ফেসবুক বিজ্ঞাপনের টাকাটি কেটে রাখবে, এর আগে নয়। এ কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ফেসবুক আরও ৫-৭ দিন সময় নেয়। পেমেন্ট প্রক্রিয়াটি ঠিক করে দেবার পরই এড তৈরি করার যাবতীয় কাজ আপনি শুরু করে দিতে পারেন।
পোস্ট বুস্ট করা
আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন এমনকিছু করতে যা দিয়ে সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়? লোকে সেসব পোস্টেই আকৃষ্ট হবে যা তার জন্য দরকারী ও প্রয়োজনীয়। স্বভাবতই আপনি তাই এমন কিছুই পোস্ট করবেন যাতে মানুষ আগ্রহী হয় এবং তা হতে পারে আপনার পণ্য বা সেবা সংক্রান্ত কিংবা এমন কিছু তথ্যবহুল পোস্ট যাতে সাধারণের আগ্রহ ব্যাপক। আপনি যখন আপনার পেইজে কিছু পোস্ট করেন, তখন পেইজটিতে যাদের লাইক ছিল তারা তা দেখতে পায়। কিন্তু, পেইজে যতজন লাইক দিয়েছে সবাই কি তা দেখবে? অবশ্যই না!
ফেসবুক এডের মাধ্যমে পেইজ বুস্ট করা
আপনার পেইজের কোন পোস্ট বুস্ট করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল, সেখানে কিছু পোস্ট করা। পোস্ট করার পর নিচে ডানদিকে বুস্ট কার্ড অপশনটি উঁকি দিবে, সেটিতে ক্লিক করলে আরেকটি নতুন এড উইন্ডো আসবে।
আপনার বামদিকে একদম উপরে অডিয়েন্স সেকশনটি দেখতে পাবেন, যেখানে অনেকগুলো অপশনের মাঝে আপনি বেছে নিতে পারবেন কোন ধরণের অডিয়েন্সের মাঝে আপনি বিজ্ঞাপনটি পৌঁছে দিতে চান। সাধারণত, এখানে আপনি তিন ধরণের অপশন পাবেনঃ
- টার্গেট করে আপনি যাদের কাছে বিজ্ঞাপনটি পৌঁছে দিতে চাচ্ছেন
- যারা আপনার পেইজে লাইক দিয়েছে তাদের সবার মাঝে
- যারা পেইজে লাইক দিয়েছে তারা এবং তাদের ফেসবুক বন্ধুরা
ফেসবুক প্রতিনিয়তই এই বিষয়গুলোকে বিন্যস্ত করতে পছন্দ করে, তাই সবসময়ই যে আপনি একই রকম অপশন খুঁজে পাবেন তা কিন্তু না। তবে, মজার ব্যাপার হল, এই অপশনগুলো বাদেও আরেকটি অপশন আছে যেখানে আপনি নিজের মত করে অডিয়েন্স তৈরি করে আপনার টার্গেটকে আরও নির্দিষ্ট করে ফেলতে পারেন।
এই সেকশনেরই নিচে আপনি বাজেট এন্ড ডিউরেশন সেকশনটি খুঁজে পাবেন, যেখানে আপনি নিজের মত করে এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমন্বয় করে নিতে পারবেন। একটি এডের পিছে আপনি দৈনিক কত খরচ করতে চান, কোথায়,কত দিন, কত তারিখ পর্যন্ত একটি এড ফেসবুক প্রচার করবে; সবই এখানে ঠিক করে দেয়া যাবে। একটি কথা মাথায় রাখবেন যে, এখানে আপনি দৈনিক হিসাবের বাজেটটি দিবেন না,দিন হিসাব করে সামগ্রিক টাকার পরিমাণটুকু আপনাকে উল্লেখ করতে হবে।
তবে আপনি যদি জানতে চান দৈনিক কতটুকু আপনি খরচ করছেন, তাহলে বাজেটটি উল্লেখ করার পর তা বিজ্ঞাপন প্রচারের দিনের সঙ্গে ভাগ করে দিলেই আপনার দৈনিক খরচ পেয়ে যাবেন। আপনার টার্গেট অডিয়েন্স, তাদের অবস্থান এবং আপনার বাজেটের ভিত্তিতে ফেসবুক আপনাকে একটি প্রাক্কলিক ধারণা দিবে কতজনের কাছে পোস্টটি পৌঁছাতে পারে।
ডানদিকে আপনি দেখতে পাবেন, ডেস্কটপ ও মোবাইল ব্যাবহারকারীদের কাছে বিজ্ঞাপনটি কীভাবে দেখানো হবে। এডটি দেখে আপনি সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা চেক করে নিন। একটি বিষয় মনে রাখবেন যে, আপনার পোস্টটি যেন অনেক লম্বা বার্তা সম্বলিত না হয় কেননা এতে করে ফেসবুক এডটির অনুমোদন নাও দিতে পারে। আবার এটাও সত্য যে, মানুষ সাধারণত লম্বা লেখা সংবলিত পোস্ট এড়িয়ে চলতে চায়। তাই এই ঝুঁকি না নেয়াই ভাল।
সবকাজ শেষ হলে নিচে ডানদিকে বুস্ট অপশনটি ক্লিক করলে আপনার এডটি রিভিউ এর জন্য পৌঁছে যাবে এবং খুব দ্রুতই পোস্টটি বুস্ট হয়ে যাবে যদি সবকিছু ঠিক থাকে। যখন আপনার এডটি অনুমোদিত হবে এবং পোস্টটিও বুস্ট হয়ে যাবে তখন আপনি নিজেই ফলাফল মিলিয়ে নিতে পারবেন; সঠিক সময়মত পোস্টটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছেছে কিনা।
একই সাথে আপনি যদি আপনার পোস্ট নিয়ে সন্তুষ্ট হোন, তাহলে এড সরে যাবার সময় হলে আপনি অ্যাড মোর বাজেট অপশনে ক্লিক করে আপনার বিজ্ঞাপনের সময়কে দীর্ঘায়িত করতে পারেন। বুস্ট শেষ হলে আপনি পোস্টটি কতদূর গেল, কতজনের নিকট পৌঁছালো, কিরকম সংযোগ হল,কতজন পোস্টটিতে ক্লিক করেছে, কোন দেশের লোকে বেশি লাইক দিয়েছে; ইত্যাদি সবরকম মেট্রিকেই যাচাই করে নিতে পারবেন।
স্বাভাবিকভাবে পোস্ট প্রদর্শন
সবাভাবিকভাবে পোস্ট প্রদর্শনের প্রথম ও প্রধান পদ্ধতি হল নিয়মিতভাবে পোস্টটি শেয়ার করা। প্রতিদিনই পোস্টটি শেয়ার করুন, এমনকি দিনে বিভিন্ন সময়ে দু থেকে তিনবার শেয়ার করতে পারেন। জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য আপনার এমন পোস্ট শেয়ার করতে হবে যা প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয়। এছাড়াও, পোস্টগুলোকে নিয়মিতভাবে নিজের প্রোফাইল থেকে শেয়ার করতেও ভুলবেন না।
আপনার সহকর্মী কিংবা অধীনস্থদেরও নিয়মিত পোস্ট শেয়ার করতে হবে। সমগ্র প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে জুড়ে কাজ করলে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিজে নিজেই গড়ে উঠবে।
ফেসবুকে -যত বেশি, তত ভাল; অর্থাৎ যত বেশি লোকে পোস্টটি শেয়ার করবে, তত বেশি তা আরও লোকের নিকট পৌঁছে যাবে। এর ফলে আরও বেশি মানুষের পোস্টটি পছন্দ হওয়ার ও তাতে লাইক দেবার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। শেয়ার করার সময় অবশ্যই পোস্টটি পাব্লিক করতে ভুলবেন না যেন। এর ফলে আপনার ফ্রেন্ডস লিস্টে না থাকলেও লোকে তা দেখতে পাবে।
পোস্টটিতে একই সাথে কিছু এঙ্গেইজিং থাম্বনেইল যুক্ত করুন, শেয়ার করার সময় এমন কিছু বর্ণনামূলক কথা লিখুন যাতে লোকে তাতে আকৃষ্ট হয়। লাইক কুড়ানোর জন্য আপনার পরিমাণের পিছে দৌড়াতে হলেও অবশ্যই খেয়াল রাখুন পোস্টটি যেন মানসম্মত হয়।
ওয়েবসাইট প্রমোট করা
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাবসায়ের ওয়েবসাইটের প্রচারণা চালানো নতুন কিছুই না। আপনার ওয়েবসাইটে মানুষের আনাগোনা বাড়াতে এবং একে বেড়ে তুলতে সাহায্য করার জন্য এটি একটি অন্যতম পন্থা। ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য আমরা অনেক কিছুই করে থাকি। সুন্দর ভিডিও বা ছবি সেঁটে কিংবা ভালো লেখালেখি বা ব্লগিং করে ওয়েবসাইটের মান বাড়াতে চেষ্টা করি। এছাড়াও সহজ সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে কেনাকাটার পদ্ধতিকেও ক্রেতাদের জন্য সাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে সচেষ্ট থাকি। কিন্তু এতসব করার পরও লোকে যদি আপনার ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে কিংবা এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারে তাহলে তা আর কোন কাজে আসল না।
সোশ্যাল মিডিয়ার একটি অসাধারণ ব্যাপার হল, এখানে আপনি একটি সম্ভাবনাময় বিশাল কাস্টওমার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা আপনার ওয়েবসাইটকে একটি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে তুলে ধরে আপনি মানুষকে এ সম্পর্কে জানাতে যেমন পারছেন তাদের সাথে একটি সুন্দর সম্পর্কও আপনার গড়ে উঠছে। এভাবেই ওয়েবসাইটের মার্কেটিং এর পাশাপাশি একটি কাস্টোমার নেটওয়ার্কও আপনি গড়ে তুলতে পারেন।
ফেসবুক বিজনেস পেইজের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের প্রচারণা
আপনি স্বভাবতই চাইবেন আপনার পেইজ থেকে কী কী অফার দেয়া হচ্ছে, কী ধরণের কণ্টেন্ট শেয়ার হচ্ছে তা বেশিরভাগ লোকই জানুক। সোজা কথায়, পেইজের কন্টেন্টের দর্শক সংখ্যা বাড়াতে যে কেউই চাইবে। আপনার ফেসবুক পেইজ যদি আপনার বিজনেস কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে, তবে এই পেইজে আপনি যত বেশি লাইক যোগাড় করতে পারবেন তত বেশি তা আপনার জন্য মঙ্গলজনক। কেননা, বেশি লোকে তখন আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারছে। এর ফলে বিজনেসের জগতে আপনার টিকে থাকা আরও জোরদার ও দীর্ঘস্থায়ী হল।
ফেসবুক এডের মাধ্যমে পেইজের লাইক বৃদ্ধি করা
আপনার নিউজফীডের বাঁদিকে যেখানে সব গ্রুপ, পেইজ ও ইভেন্ট সংক্ষিপ্তাকারে দেয়া থাকে, সেখান থেকে পেইজে ক্লিক করলে ফেসবুক আপনাকে আপনার পেইজে নিয়ে যাবে। পেইজে যাওয়ার পর আপনার পেইজের কাভার ফোটোর উপরে গেট মোর লাইকস নামে একটি ফিচার লক্ষ্য করবেন। ফিচারটিতে ক্লিক করুন।
অবশ্যই এটা নিশ্চিত করে নিবেন যে, পেইজের এডমিন হিসেবেই আপনি লগ ইন করেছেন। তা না হলে আপনি এড তৈরি করতে অপারগ কেননা, কেবলমাত্র পেইজ এডমিনই এই ক্ষমতা রাখে। কিছু পেইজের ক্ষেত্রে এই লাইক অপশনটি পেইজের টাইমলাইনে থাকে, তাই বাটনটি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত নিচের দিকে স্ক্রল করতে থাকুন। যখন আপনি তা খুঁজে পাবেন, তখন দেখবেন সেখানে,ইউএস ডলারে বাজেট দেয়া আছে। আপনার এডের পিছে দৈনিক খরচটাই এখানে দেয়া, সামগ্রিক টাকার পরিমাণটি নয়; এটা মাথায় রেখেই আপনাকে আগাতে হবে।
ফেসবুক এডের পুরো ব্যাপারটি কেমন দাঁড়ায় অর্থাৎ, কতটি লাইক এডের পরে বাড়ল, বাড়তি কতজন মানুষ এডটি দেখল,সামগ্রিক প্রচারণাটি কেমন হল; এসব সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ও আগাম ধারণা পেতে আপনি একটি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। তা হল, প্রথমে অল্প পরিমাণ টাকা প্রদান করে অল্প কিছুদিনের জন্য এড দিন। ফলাফল আশানুরূপ হলে আপনি চাইলেই আরও বেশিদিনের জন্য এড দিতে পারেন। বাজেট সেট করে দেয়ার পরে ফেসবুক আপনাকে একটি আনুমানিক ধারণা দিবে, আপনি কতটি লাইক পেতে পারেন, কতজন দেখতে পারে, ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে আপনার দৈনিক বাজেট যত বেশি হবে, আপনি তত বেশি লাইক পাবেন। তবে এটাও মাথায় রাখবেন যে, প্রতিদিন আপনি যে একই পরিমাণে লাইক পাবেন তা কিন্তু নয়। একদিন এর সংখ্যা বেশি হবে তো আরেকদিন কমও হতে পারে। এভাবে, লাইক বৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে আপনি কতদিন এডটি প্রচার করবেন তা ঠিক করে নিতে পারবেন। ৭ দিন থেকে শুরু করে ১৪ দিন এমনকি ২৮ দিন পর্যন্তও তা রাখতে পারেন আবার এভাবে আপনার না পোষালে একটি নির্দিষ্ট তারিখও ঠিক করে দেবার সুবিধা ফেসবুক আপনাকে দিচ্ছে।
বাজেট এন্ড ডিউরেশন সেকশনের উপরে রয়েছে ইন্ট্রেস্টস সেকশন। এখানে আপনি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সকে আরও নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। ফলে যাদের কথা মাথায় রেখে আপনার পেইজ ও এড তৈরি করা, তাদের কাছে বার্তা পৌঁছানো আরও সহজ হল। ধরা যাক, আপনি খেলাধুলার সরঞ্জামাদি বিক্রি করেন। তাহলে, আপনি ইন্ট্রেস্টস সেকশনে এমনকিছু দিবেন যা এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। হতে পারে তা ফিটনেস,রানিং, বা এ জাতীয় কিছু। এর ফলে খেলাধুলা বিষয়ে যাদের আগ্রহ আছে তাদের কাছে এই ধরণের এড পৌঁছে যাবে।
ইন্ট্রেস্টস সেকশনের উপরে আপনি লোকেশন অপশনে যেয়ে কোথায় কোথায় আপনার এডটি দেখানো হবে সেই অবস্থান ঠিক করে দিতে পারেন। এই ব্যাপারটি আরও চমৎকার কেননা এখান থেকে আপনি যে লাইকগুলো পাবেন তার বেশিরভাগই দরকারি লাইক। এইযে আপনি কোন একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন, এর ফলে ওইখানে অবস্থানকারীদের চোখে বিজ্ঞাপনটি পড়বে এবং তাদের লাইক দেয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি হবে। আপনি নিশ্চয়ই লোকেশনে এমনসব জায়গার কথাই উল্লেখ করবেন যেখানে আপনি পেইজটিকে পৌঁছাতে চাইছেন। আপনি যদি স্থানীয় ব্যাবসায়ী হন, তবে ওইসব এলাকাকে কেন্দ্র করুন যেখানে কাস্টোমার পাবার সম্ভাবনা বেশি। আবার আপনার যদি অনলাইন ব্যবসায় হয়, তবে যেইসব এলাকায় আপনার পণ্যের বাজার এখনো গড়ে উঠেনি, সেই এলাকাগুলোকে টার্গেট করুন।
লোকেশনের উপরে রয়েছে এইজ সেকশন। এখান থেকে আপনি টার্গেট অডিয়েন্স আরো নির্দিষ্ট করে দিতে পারছেন। বামদিকের স্লটে টার্গেট অডিয়েন্সের সর্বনিম্ন বয়স এবং ডানদিকের স্লটে সরবোচ্চ বয়স বসিয়ে দিন। সবশেষে এই অপশনের উপরে জেন্ডার সেকশনে যেয়ে কোন বিষয়টিকে আরও নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। যেমন, ফ্যাশন বা লাইফস্টাইল ব্যবসায়ে সাধারণত নারীদের আগ্রহ বেশি থাকে। এভাবে আপনি যেই লিঙ্গের দর্শকের আপনার বিজ্ঞাপন দেখা বেশি জরুরী তাও নির্ধারণ করে দিতে পারেন।
এরও উপরে রয়েছে এড ক্রিয়েটিভ সেকশন। এখানে আপনি বাড়তি ছবি সংযুক্ত করতে পারেন, নতুন কোন বার্তা সংযোজন করতে পারেন, আগের কিছু বাদ দিতে পারেন, বিজ্ঞাপনের ছবির সাইজ পরিবর্তন করতে পারেন, সেরা ইফেক্টটি দেয়ার জন্য ছবির পজিশনও ঠিক করে দিতে পারেন; সবমিলিয়ে পুরো বিজ্ঞাপনটি নিজের মত করেই তৈরি করে নেয়া যায়।
উইন্ডোর ডানদিকে একটি প্রিভিউ দেখানো হবে, ডেস্কটপ ও মোবাইল ব্যাবহারকারীরা কে কীভাবে এডটি দেখবেন। সবকিছু মনের মত হলে প্রমোট ক্লিক করুন। ব্যাস,হয়ে গেল আপনার কাজ।
টাকা ছাড়াই লাইক কামানো
এড তৈরি করে লাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা গেলেও এর পাশাপাশি আপনাকে সাধারণভাবে পেইজের লাইক বৃদ্ধির উপায়ও জানতে হবে। এতে সাশ্রয় যেমন হবে তেমনি খাঁটি ফ্যান,যারা আপনার কন্টেন্ট পছন্দ করেছে এবং নিয়মিত আপনার পেইজ ফলো করে কিংবা নতুন কোন কন্টেন্টের অপেক্ষা করে;তাদের সংখ্যাও বাড়বে। ম্যানুয়ালি এই কাজটা আপনি করতে পারেন মানুষকে আপনার পেইজে লাইক দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে।
প্রথম ও সবচেয়ে সহজ উপায়টি হল, সরাসরি মানুষকে পেইজে লাইক দেবার জন্য আমন্ত্রণ জানানো। বন্ধু তালিকার সকলকে সবার আগেই জানিয়ে ফেলুন। দৈনিক কতজন বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন তার উপর ফেসবুকের আরোপিত সীমাবদ্ধতা আছে। আপনার যদি অনেক বন্ধু থেকে থাকে তাহলে আপনি ভাগ্যবান; দেরি না করে আপনার পেইজ সম্পর্কে তাদের জানাতে শুরু করুন। অবশ্যই প্রতিদিন এই কাজটি করতে হবে কেননা যতজনের নিকট জানাতে পারেন ততই আপনার পেইজের জন্য ভাল। এছাড়াও, একবারেই যে সবাই জেনে যাবে এমনও কিন্তু না।
আরেকটি বিষয় হল, যখন আপনি পেইজে কোন কিছু পোস্ট করেন, তখন তাতে কারা লাইক দিয়েছে তা দেখা যায়। এখান থেকে আপনি অনেককেই আমন্ত্রণ জানাতে পারেন পেইজটিতে লাইক দেয়ার জন্য। এর জন্য যে তাদের আপনার বন্ধু তালিকায় থাকতে হবে এমন না। আপনার বন্ধু তালিকায় নেই, আবার আপনি আমন্ত্রণ ও জানাননি; এরকম লোকদের আমন্ত্রণ জানাতে পোস্ট বুস্ট করে জানাবার ব্যবস্থাও আছে।
আবার একটি মজার ব্যাপার হল, আপনার পেইজে কেউ লাইক দিলে তার এক্টিভিটি থেকে তার ফেসবুক বন্ধুরা দেখতে পারে সে কিসে লাইক দিল। এভাবে একজনের মাধ্যমে আরেকজন আপনার পেইজের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারে এবং সেও এতে লাইক দিতে পারে। এরই সঙ্গে আপনি একটি কাজ করতে পারেন, তা হল, পেইজে কিছু পোস্ট করলে অবশ্যই নিজের প্রোফাইল থেকেও তা শেয়ার করা।
ধীরগতির প্রক্রিয়া হলেও, এই পদ্ধতিতে আপনি অনেক দরকারি ও কার্যকরী লাইক পাচ্ছেন। তবে অবশ্যই যে পদ্ধতিই বেছে নেন না কেন, আপনাকে পেইজের ফ্যানদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। তা হতে পারে বিভিন্ন ধরণের লেখালেখির মাধ্যমে, কিংবা পোল খুলে তাদের মতামত নিয়ে, পোস্টে কেউ কমেন্ট করলে তার সুন্দর উত্তর দিয়ে। পেইড পদ্ধতিতে এড দেয়ার পাশাপাশি এই কাজগুলোও চালিয়ে গেলে আপনার পেইজের পেছনে ফিরে তাকাবার সম্ভাবনা খুব কম।
ফেসবুক এডের মাধ্যমে ওয়েবসাইট দর্শনের হার বৃদ্ধি
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন দিতে চান, তবে প্রথমত আপনাকে যা করতে হবে, তা হল একটি ভাল ও আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট তৈরি করা। পেইজে আপনার ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিয়ে আপডেত করুন। তাহলে প্রতিবার ফেসবুক থেকে নতুন এড প্রচার করার সময় আপনার আলাদা করে ওইয়েবসাইটের লিঙ্ক দেয়ার ঝামেলা করতে হচ্ছে না। তাছাড়া পেইজে ওয়েবের লিঙ্ক দেয়া থাকলে সেখান থেকে মানুষ তা দেখে ক্লিক করতে পারে। তাই, পেইজে লিঙ্ক দেয়াটা খুব জরুরী।
পেইজে যেয়ে নিচের দিকে স্ক্রল করুন। আপনার স্ক্রীনের একেবারে নিচে বামদিকে গ্রো বিজনেস লেখা সম্বলিত একটি নীল রঙের কার্ড উঁকি দিবে। কার্ডটিতে ক্লিক করুন এবং গেট মোর ওয়েবসাইট ভিসিটরস অপশনে ক্লিক করুন। এর ফলে এড তৈরির জন্য নতুন একটি উইন্ডো আসবে।
এড ক্রিয়েটিভ সেকশনে আপনি চারটি জিনিস পাবেন জেগুলো নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে পারবেনঃ
ইউআরএল(URL): এটি হল আপনার ওয়েব এড্রেস। পেইজে যদি একটি ওয়েব এড্রেস আগেই দিয়ে থাকেন,তাহলে ইউআরএল এ তা দেখাবে। তবে আপনি যদি অন্য কোন এড্রেস দিতে চান কিংবা এড্রেস বদলাতে চান তাহলে এখানে বদলে নিতে পারবেন।
টেক্সট (Text): এখানে আপনার পেইজ ও ওয়েবসাইট সম্পর্কে অল্প কথায় কিছু সুন্দর বার্তা আপনাকে লিখতে হবে। বার্তাটিকে অবশ্যই আবেদনময়ী হতে হবে যেন লোকে তা পড়ে ওয়েবসাইট সম্পর্কে আগ্রহীহয় এবং তাতে একটি ঢুঁ মেরে আসে।
ইমেইজেস/ ভিডিওস (Images/ Videos): বিজ্ঞাপনের জন্য কোন ছবি বা ভিডিও এখানে আপনি দিতে পারেন। আপনি যদি ছবি দিতে চান, তাহলে ২৫ শব্দের মাঝে একটি বার্তা দেবার সুযোগ এখানে আপনার আছে। খুব সুন্দর একটি বার্তা বা ক্যাপশন ছবির সাথে দিয়ে দিলে মানুষের চোখে পড়বে। এতে আপনার বিজ্ঞাপন আরও জোরালো হল। ছবির রিপজিশন করে নিন যাতে প্রথম দেখায় ছবিটি সম্পর্কে একটি সুন্দর ধারণা পাওয়া যায়।
আপনি ভিডিও আপলোড করতে চাইলে স্লাইডশো তৈরি করে একটি সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক জুড়ে দিয়ে ভিডিও বানানোর সুযোগও এখানে আছে।
ছবি বা ভিডিও যাই দিন না কেন, অবশ্যই তা যেন নান্দনিক হয় সে খেয়াল রাখবেন। এতে মানুষের আকর্ষণ বাড়বে এবং আপনার ব্যাপারে তারা আগ্রহী হবে। ভিডিও এবং ছবি; দুটোর সাথেই কল টু একশন বাটন রয়েছে, এখান থেকে আপনি অনেক রকম অপশনই বেছে নিতে পারেনঃ এপ্লাই নাও, কল নাও, সী শপ, বুক, কন্ট্যাক্ট আস, ডাউনলোড, লারন মোর, সাইন আপ, ওয়াচ মোর ইত্যাদি বাটন থেকে পছন্দমত বাটনগুলো আপনি সংযুক্ত করে দিলে, তাতে চাপ দিয়ে মানুষ পছন্দসই জায়গায় চলে যাবে।
এরপরে আপনি আরেকটি সেকশন পাবেন, তা হল অডিয়েন্স। এখানে আপনি আগের মতই আপনার বিজ্ঞাপনের দর্শকদের বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান ইত্যাদি ঠিক করে দিতে পারেন। এখানে আরেকটি বাড়তি সুযোগ থাকছে আপনার জন্য। জেনারেল ইন্ট্রেস্টস অপশনটিতে আপনি আরও ভালভাবে নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। বাড়তি ইন্ট্রেস্ট যোগ করে নিলে তাতে টার্গেট অডিয়েন্স পাওয়া আরও সুবিধাজনক। যেমন, সাধারণ আগ্রহের মধ্যে মিউজিক বা গান শোনা থাকতেই পারে। এখানে আপনি হাউজ মিউজিক বা টেকনো মিউজিক বা অন্য যে কোনকিছু যোগ করে ব্যাপারটিকে নির্দিষ্ট কওরে দিলে আরো সহজেই কাঙ্খিত দর্শক পাওয়া যাবে।
বাজেট এন্ড ডিউরেশন সেকশনে আপনি দৈনিক ভিত্তিতে হিসাব করে কতদিনের জন্য দিতে চান তার মোট অঙ্কটি ইনপুট করুন। আর সবসময়ের মতই, ডানদিকে আপনার এডের প্রিভিউ দেখান হবে।
ওয়েবসাইট প্রমোশনের সঙ্গে সঙ্গে ইন্সটাগ্রাম ফীড প্রিভিউও এর সাথে থাকবে। এর ফলে, এই এডগুলো ইন্সটাগ্রামেও প্রচারিত হবে। এই সেকশনটি আপনাকে অবশ্যই চেক করে নিতে হবে কেননা ছবি বা ভিডিওর ব্যাপারে ইন্সটাগ্রামের কিছু নির্দিষ্ট বাধবাধকতা থাকে। আপনার এড যদি সেগুলো মেনে তৈরি করা থাকে, তাহলে ইন্সটাগ্রামেও আপনার এড প্রচার করা হবে এবং এর ফলে আপনি বাড়তি দর্শক পেয়ে থাকবেন।
সবকিছু ভালোভাবে দেখে মিলিয়ে নিন ঠিকাছে কিনা,দুইবার বা এর বেশি দেখলে ভাল, এতে করে ভুল ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি। সব ঠিক থাকলে এড ক্রিয়েশন উইন্ডোর নিচে ডানদিকে একদম কোণায় প্রমোট বাটনে চেপে এড তৈরি করে ফেলুন।
পরোক্ষভাবে ওয়েবসাইটের প্রচারণা চালানো
প্রথমত আপনার যা করতে হবে তা হল ফেসবুক পেইজের নির্দিষ্ট জায়গায় আপনার ওয়েব এড্রেসটি দিয়ে রাখা। যখন আপনার পেইজটি কেউ দেখবে, আপনার ওয়েবসাইটটিও তার দেখা প্রয়োজন। ওয়েব এড্রেস দেখে তাতে ক্লিক করে সরাসরি ওয়েবসাইটে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকলে, বিষয়টি তার জন্য সহজ হয়। এতে করে সহজেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তাতে কী আছে না আছে, কোন অফার আছে কিনা, তা জানা সহজ হয়।
পরের ধাপটি হল, পেইজে ওয়েবসাইটটি শেয়ার করা। এ কাজটি আপনাকে বারবার করতে হবে। পেইজে ছাড়াও ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও যত বেশি শেয়ার করা যায় ততই ভাল। একই সঙ্গে, আপনার প্রতিটি কন্টেন্ট ও পোস্টের সঙ্গে আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানাটি