ফেসবুকে ক্লায়েন্ট পাওয়া যায় কীভাবে?

Contents
ফেসবুকে ক্লায়েন্ট পাওয়া যায় কীভাবে?
পর্ব ২ঃ
পর্ব ১ এর লিঙ্কঃ Click Here
সময়টা ২০১৩ এর মাঝামাঝি হবে।
আপওয়ার্ক তথা তখনকার সময়ের ওডেস্ক এ একাউন্ট চালু করার পর থেকেই আমি প্রধান যে সমস্যা ফেস করেছিলাম তা হচ্ছে বিড করা। ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে সব থেকে বিরক্তিকর ব্যাপার ছিল বিড করা। এখন পর্যন্ত আপওয়ার্ক আমি মনেহয় সব মিলিয়ে ১৫ টির বেশি বিড করিনি, আসলে ধৈর্যে কুলায়নি বলতে পারেন।
এরকম করতে করতে তখন লক্ষ্য করলাম আমার ধৈর্য এবং উপার্জন দু ই তখন পর্যন্ত শূন্য।
প্রচণ্ড হতাশায় দিন যাচ্ছে তার উপর দিন দিন ধৈর্যহারা হচ্ছি। তো এই বুক ভর্তি হতাশা নিয়েই শুরু করলাম প্রচুর পরিমানে ব্লগ পড়া এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখা। অনেক কিছু শিখতে থাকলাম পাশাপাশি নিজের স্কিল টাকেও বাড়ানোর চেষ্টায় থাকলাম।
একদিন মাথায় বুদ্ধি আসলো টুইটার নিয়ে। কারন টুইটারে ব্যাবহার করে সাধারণ মানুষ খুব কমই মজা পায়, আবার অন্যদিক দিয়ে যারা নিয়মিত টুইটার ব্যাবহার করে তারা সাধারনত একটু ওয়েটফুল হয়। তাছাড়া টুইটারের সার্চ ইঞ্জিনও স্পেসিফিক এবং সহজ।
তাই আমার পুরনো টুইটার একাউন্ট টাকে একটু ঘষে মেজে দাড় করালাম। তারপর শুরু হল টুইটারে ক্লায়েন্ট খোঁজা। এবং টুইটারে ক্লায়েন্ট খোঁজা হচ্ছে সবচেয়ে ইজি কাজ। আপনি “Looking for logo/Looking for Design/ Looking for Website Designer ” ইত্যাদি লিখে সার্চ করলেই আপনার সামনে সব চলে এসবে।
তখন দেখে দেখে ক্লায়েন্টদের ম্যাসেজ দেওয়া শুরু করলাম এবং ভালই রেসপন্স পেলাম অবশেষে একটা কাজও পেয়ে গেলাম। তখন তো আমি মহা খুশি। তো সমস্যা হল পেমেন্ট নিয়ে। কারণ পেয়নির ছাড়া পেমেন্ট নেওয়ার মত আর কোন অপশন আমার কাছে ছিল না। তাই ক্লায়েন্ট কে অনুরুধ করলাম ওডেস্কে একাউন্ট খুলে আমাকে হায়ার করতে। হায়ার করলো এবং খুব সুন্দর একটা ফিডব্যাকও দিল।
তো এভাবেই চলতেছিল এবং মোটামুটি ভালই কাজ পাচ্ছিলাম টুইটার থেকে এর মধ্যে পেপাল একাউন্টও খুলে নেই তাই আর ওডেস্কে যাওয়ার প্রয়োজনও পরেনি তখন।
এভাবে এক বছর যাওয়ার পর অবস্থার কিছুটা অবনতি হল কারণ টুইটারে কাজ খোঁজা মানুষ অনেক বেড়েগিয়েছিল তাই প্রতিযোগিতাও তুলনামূলক বেড়ে গেল।
আবার কাজ পাইনা এবং আবারও হতাশ, সব শেষে ধৈর্যহারা হয়ে টুইটারও ছাড়লাম।
এর মধ্যে খেয়াল করলাম ফেসবুকে আমি অনেক বেশি টাইম দিচ্ছি। অনেক চেষ্টা করলাম ফেসবুক থেকে দূরে থাকতে, কিন্তু কোন ভাবেই পারছিলাম না। কোন কারণ ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিউজ ফিড স্ক্রোল করতাম। তখন একদিন মাথায় জেদ চাপলো। নাহ, ফেসবুক আমি ছাড়বনা এবং যেহেতু ফেসবুকেই আমার অনেক বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে তাই যে করেই হোক এই সময়াটাকে ফেসবুকের মাধ্যমেই উপার্জনের দিকে নিয়ে যেতেই হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ, আগের ফেসবুক আইডি ডিলিট দিয়ে নতুন একটি আইডি খুললাম এবং আইডিতে কোন পরিচিত মানুষ রাখিনি তখন। প্রোফাইল খুব সুন্দর করে সাজালাম এবং শুরু হল নতুন যাত্রা।
দু-তিনমাস চেষ্টার পর হঠাত একদিন এক ইতালিয়ান ভদ্রলোক নক দিল। তার একটি লোগো লাগবে। সাথে সাথে রেসপন্স করলাম এবং স্কাইপি আইডি দিলাম একটু পরেই স্কাইপিতে ফোন দিলো। সব কিছু বুঝিয়ে বলার পর আমার চার্জ জানতে চাইলো। জদিও আগে ৫০-১০০ ডলারে লোগো করতাম তবুও চিন্তা ছিল ফেসবুকে ১৫০ থেকে শুরু করবো এবং ভয়ে ভয়ে এটাই বলেদিলাম। সেও রাজি হয়ে গেল এবং কাজ করে দেওয়ার পরে সে খুব খুশিও হয়েছিল। তার পর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি। কম বেশি কাজ করে যেতে থাকলাম।
আমার সাথে এই পর্যন্ত যত কিছুই ঘটেছে তবুও আমি কখনই প্রফেশনালিজমে বিন্দুমাত্র ছাড় দেইনি। আসলে আমি এখনও বিশ্বাস করি আমি আজ যতটুকু এগিয়েছি তার যোগ্য আমি নই, এর কারণ আমি এখন বুঝতে পাই যে আমার কাজের দক্ষতা থেকেও প্রফেশনালিজম অনেক ক্ষেত্রে আমাকে এগিয়ে রেখেছে।
এখন আপনি ই বিবেচনা করুন আপনার প্রফেশনালিজম আপনি কতদূর পর্যন্ত রাখতে চান।
আর যারা অন্তত ফেসবুক প্রোফাইলটা প্রফেশনালদের মত রাখতে চান তাদের জন্য প্রথম টিপস হল, প্রোফাইল ছবিটা অবশ্যই প্রফেশনাল রাখবেন। আর আমরা বাংলাদেশীরা প্রফেশনাল ছবি বলতে বুঝি দাতে দাত চেপে সোজা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ খিঁচিয়ে পেছনে নিল বা সাদা কালার ব্যাকগ্রাউন্ড রেখে ছবি তুলাকে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। প্রফেশনাল ছবি হচ্ছে আপনার হাস্যোজ্জ্বল একটি পোর্ট্রেইট যেটাতে আপনাকে প্রাঞ্জল মনে হবে।
দ্বিতীয়ত খুব সুন্দর করে একটি প্রোফাইল ইন্ট্রো দিন যেটাতে খুব অল্প কথায় আপনি কি কি করেন তা লিখা থাকবে। ইন্ট্রো আসলে “আই এম হো আই এম” বা কোন উক্তি লিখে রাখার জন্য নয়। এই ইন্ট্রো হচ্ছে আপনার নিজেকে খুব কম শব্দে উপস্থাপন করার জন্য ।
বিঃ দ্রঃ পূর্বেরকার মত এবারো বলতে চাই, হাতের লেখা খারাপের জন্য দুঃখিত।
আর এই সিরিজ চলবে।
যদি আপনি আমার লেখায় উপকৃত হন বা লেখা ভাল লেগে থাকে তাহলে উৎসাহ দিতে ভুলবেন না।
ধন্যবাদ
Writer – Hafizur Rahman