পাগলীটাকে বড় ভালবাসি

পাগলীটাকে বড় ভালবাসি
– মুন্নি কোথায় গেলা??
– কেন কি হয়েছে?
– আমার টাই টা কোথায়?
– দেখ নীল, তুমি নিশ্চিতভাবেই জানো টাই টা কোথায় আছে, তবুও শুধু শুধু বিরক্ত করছো কেন? দেখছো না আমি কাজ করছি।
এবার আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম,
-নাতো, তোমাকে আমি দেখছি না। আর তুমিও কিন্তু নিশ্চিতভাবেই জানো তোমাকে আমি কেন ডাকছি।
মুন্নি হাল ছেড়ে দেওয়ার ভংগিতে বললো,
– আরে নীল, আমিতো এখন কাজ করতেছি।
ঠিকাছে বাবা আসছি।
মুন্নি হাতটা মুছে টাইটা আমার কাছে নিয়ে এসে বললো,
-এই নাও তোমার টাই।
-পড়িয়ে দাও॥
– এই দুষ্টো একদিন নিজে নিজে পড়লে কি হয়। কাজের সময়ও ডাকতে হয়?
আমি কৌতুকপূর্ণ কন্ঠে বললাম,
– যদি নিজে নিজেই টাই পড়তে হয় তবে বিয়ে করেছি কেন? হুম শুনি।
– তুমি না…
– আমি কি ।
– তুমি একটা আস্ত পাগল।
-আর?
– আর বড্ড পাজি।
– আর…?
– আর অনেক বেশী দুষ্ট ।
– আর…?
– আর কিছুনা?
– আর..?
– আর তোমার মাথা ॥
– আর ..?
– দেখো নীল দুষ্টুমি করবা না বলে দিচ্ছি ।
– করলে কি করবা..?
– মাইর লাগাবো।
– না বাবা খুব ভয় পাইছি, আর দুষ্টুমি করবো না। এবার লক্ষ্মী মেয়ের মত টাইটা বেধে দাওতো সোনামনি। অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে ।
টাইটা বাধতে বাধতে মুন্নি বলল,
– তুমিইতো লেট করতেছো।
– তোমাকে বেশী করে দেখে যাওয়ার জন্যইতো লেট করতেছি।
– কে বলেছে আমাকে দেখতে।
– আমার বউকে আমি দেখবো, সেটা আবার কাউকে বলে দিতে হবে নাকি??
– হয়েছে ,ঢের হয়েছে , এবার ভদ্র ছেলের মত অফিসে যাও।
আমি অফিসে যাবার জন্য হাটা দিলাম। বারান্দায় এসে মনে পড়লো কিছু একটা নেওয়া হয়নি ॥ তাই আমি জোরে মুন্নিকে ডেকে বললাম,
– মুন্নি একটু এদিকে আসোতো।
– আবার কি হলো ..
– আরে আসোইনা ।
মুন্নি দৌড়ে আসতেই ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম,
– এবার তাহলে যাই।
– পাগল একটা, যাও, রাতে একটু তাড়াতাড়ি এসো তোমার জন্য স্পেশাল রান্না হবে আজ।
-অবশ্যই তাড়াতাড়ি আসার চেষ্ঠা করবো।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বাস স্টেশনের দিকে হাটা দিলাম।
***
মুিন্নর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল ভার্সিটি লাইফে। ও ভার্সিটিতে আসতো বোরখা পড়ে । মুখে নেকাব পড়তো। ও দেখতে কেমন আমার কোন ধারণা ছিলনা। কিন্তু আচার ব্যবহার খুব ভাল ছিল। ওটা দেখেই আমার মুন্নিকে ভাললেগে গিয়েছিল । কিন্তু সেটা অবশ্য কেউ জানতো না। আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ডের বাসা ছিলো ওদের এলাকায় । ঐ ফ্রেন্ড টাই বলেছিল,” বুঝছস মামা, এ মেয়েটা আমাদের এলাকায় থাকে । ও খুব ভদ্র । দেখতে শুনতেও অনেক ভালো”
আমি ঐ ফ্রেন্ডের কাছ থেকে মুন্নিদের বাসায় ঠিকানা নিয়েই বাবা-মা কে পটিয়ে ওদের বাসায় প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। ওদের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক উত্তর এসেছিল । ওরাও আমাকে পছন্দ করে । যার ফলে ভার্সিটি লাইফেই আমাদের বিয়েটা হয়ে যায় । অবশ্য সে সময়টাতে মুন্নি ওদের বাসায়ই থাকতো, ওদের বাসা থেকেই ভার্সিটিতে আসতো, আর আমি আমার বাসা থেকে । দুজন ভার্সিটির ক্লাস ফাকি দিয়ে কত জায়গায় যে ঘুরেছি তার কোন ইয়াত্তা নাই। স্মৃতিসৌধ, ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক, একসাথে স্টার সিনেপেক্সে হলিউডি সিনেমা দেখা, রিকশা করে ঘুরাঘুরি এসব সবই ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। ভার্সিটি শেষ করেই জব নিলাম । জবটা ভালই। সুতরাং অফিস থেকে অদূরে একটা ফ্ল্যাট নিলাম। মুন্নিকে নিয়ে ফ্লাটে নিলাম । বাবা-মাকেও এখানে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ওনারা আসতে চাননি । অগত্যা দুজন মিলেই সংসার শুরু করলাম ।
এইতো, আমরা এখন বেশ আছি ।
***
অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি করেই বাড়ি ফিরলাম। একেতো মহারানীর আদেশ, তার উপরে স্পেশাল খাবার । আমাকে আর অফিসে আটকায় কে। অবশ্য আজ কাজের চাপও কম ছিলো। সুতরাং তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে কোন অসুবিধাই হয়নি।
বাসায় এসে দেখি এখনো মুন্নিকে রান্না বান্না শেষ হয়নি । আমি কাপড় চোপর পাল্টে রান্নাঘরে মুন্নিকে হেল্প করতে চলে আসলাম ।
– ম্যাডাম, আপনাকে আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি বলবেন?
– স্যার, আপনাকে কোন সাহায্য করতে হবে না। আপনি সারাদিন কাজ করে এমনিতেই ক্লান্ত ।আপাতত আপনি একটু রেস্ট নিলেই আমি খুশি ।
আমি ফাটা বেলুনের মত চুপসে গিয়ে বললাম,
– তাই …
– আলবত তাই ।
– আমিতো ভাবলাম আমার গিন্নিটার কাজে একটু সাহায্য করা দরকার ।
– ভাবার জন্য ধন্যবাদ ।
– শুধু একটা ধন্যবাদ, আমার কিন্তু খুব একটা পোষালো না। আর কিছু দেয়া যায় না ম্যাডাম ।
– যায়তো..
– কি দিবে..
– আগুনের ছ্যাকা।
– ছি: ছি: ছি:, না ভাই আপাতত আমার কিচ্ছু লাগবে না।
– তাহলে ভদ্র ছেলের মত একদম চুপ থাকো। আমাকে রান্না করতে দাও ।
**
রাত একটা । মুন্নি ঘুমিয়ে আছে । ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়েটাকে একেবারে নিস্পাপ শিশুর মত লাগে। একেবারে গুটি শুটি হয়ে আমার বুকের মাথা রেখে ঘুমোয়। এই সময়টায় ওকে খুব মায়াবী মায়াবী লাগে।
জানালাটা খোলা। আজ বোধহয় চাদনি পসর রাত। জানালা দিয়ে চাদের আলো আমাদের ঘরটাকে আলোকিত করে তুলেছে ।ঘরটাতে আলো আধারের খেলায় মুন্নিকে অন্যরকম লাগছে । জোছনা মুন্নির খুব পছন্দের। ভাবছি ওকে ডেকে ছাদে বসে বসে জোছনা দেখলে কেমন হয়। সাথে কফি থাকলে ব্যাপারটা আরো জমবে। এক কাজ করা যায়, প্রথমে কফি বানাই গিয়ে, এরপর নাহয় মুন্নিকে ডেকে তুলবো।
কফি বানান শেষ করে দুটো মগে কফি নিয়ে বাকিটুকু ফ্লাসকে ভরে রাখলাম।এবার আস্তে অস্তে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মুন্নিকে ডাকলাম,
– এই মুন্নি,মুন্নি । উঠো।
মুন্নি ঘুম জরানো কন্ঠে বললো,
– কি,
আমি বললাম,
– উঠো।
ও চোখ কচলাতে কচলাতে বললো,
– সকাল হয়ে গেছে??
– আরে না । সবে মাত্র একটা বাজে। উঠে দেখো বাইরে কি সুন্দর জোছনা।
মুন্নি এবার উঠে পড়ে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয় আসলো।
– ঘুম থেকে উঠিয়েছি বলে রাগ করোনিতো??
– আরে নাহ। তুমি বরং ভালোই করেছো।এরকম জোছনা রাত কেউ ঘুমিয়ে কাটায় নাকি?
– থেংকস্ বাবা, বাচালে আমায়। এই নাও কফি।
– কফি কোথা থেকে আনলে ।
– আমি বানিয়েছি।
– শুধু শুধু কস্ট করতে গেলে কেন। আমাকে বললেইতো হতো আমি বানিয়ে দিতাম।
– সব সময়তো তুমিই বানিয়ে দাও। আজ নাহয় তুমি আমার বানানোটা খেলে। নাকি স্বাদ নিয়ে টেনশনে আছো। টেনশন না করে এক চুমুক খেয়েই দেখোনা , আমি তোমার থেকে কম ভালো বানাইনা, হুম।
– ঠিকাছে বাবা ঠিকাছে, খাচ্ছি। তবে তোমার হাতের কফি আমার কাছে কিন্ত খারাপ লাগবে না।
কফির মগটা হাতে নিয়ে মুন্নি ছাদের এক কোনে গিয়ে দাড়াল। ওকে খুব বিষণ্ণ মনে হল। আমার ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– কি হয়েছে, তোমাকে এমন মন খারাপ দেখাচ্ছে কেন।
মুন্নি কোন কথা না বলে ঘুরে গিয়ে আমার বুকে মাথা দিয়ে নাক ঘসতে ঘসতে কাদতে লাগলো ।
আমি বললাম,
– কি হয়েছে সোনামনি, তুমি কাদছ কেন?
ও আমার বুকে মাথা রেখেই ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো,
– নীল তুমি আমাকে এত্তো ভালবাসো কেন? এত ভালোবাসা আমার কপালে সইবেতো।
আমি ওর মুখটা দুহাতে উপর তুলে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,
– পাগলী একটা,এই সামান্য কারণে কাদা লাগে। আরে পাগলী আমার বউকে আমি না ভালবাসলে কে ভালোবাসবে, হুম!
ও বললো,
– সব সময় এরকমভাবে ভালবেসে যাবেতো আমায়?
-হুম,অনেক ভালবাসি আমার মুন্নি পাগলিটাকে
-হু! আমিও
-এদিকে আসোনা, একটে ই করি!
-এহহহ শখ কতো, সারাক্ষন শুধু এসব করতে ই মন চায়?
-হুম, আমার মন চায় সবসময় তোমার ঠোটে ঠোট রাখতে
-ওহ! তা আমার কি কম মনে চায় বলেই ঠোটে ঠোট মিলিয়ে নিল!
ওই মিয়ারা কম তো শুনেননাই আবার কি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের কাহিনী ও কি শুনতে চান নাকি?
যান যান এবার মুন্নি থেকে নীরাকে আনার ব্যাবস্থা করতে হবে……