ছেলে বেলার ডায়েরী (পর্ব-৪)

ছেলে বেলার ডায়েরী (পর্ব-৪)
বাবার বিয়ে
‘পথের কাঁটা’ জিনিসটা যাই হোক, ডাক্তারের কথায় আমি খুব ভয় পেলাম। দৌড়ে গিয়ে দিদাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলাম। ‘ আমি ডাক্তারের কাছে যাব না দিদা। ডাক্তার আমাকে ব্যাথা দেবে। মনে নাই একবার যখন ইনেজকশন দিল?’
আমার কান্না দেখে দিদার রাগ আরও বেড়ে গেল ‘দেখেছো হৃদি কেমন ভয় পেয়েছে?’ এসব কথা আর মুখেও আনবে না। কখনো।’
বাবা আমাকে দিদার কাছ থেকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করে দিল ‘কেউ তোমাকে ডাক্তারের কাছে নেবে না মা। তোমার তো আর অসুখ নেই।’
মা চুপ করে রইলো। আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম, আমকে আর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
এর পরের দিনগুলা কেমন যেন অন্য রকম হয়ে গেল। মা আজকাল খুব চুপ চাপ থাকে। আমাকে বকা দেয় না ঠিকই । স্কুলে যাওয়ার সময় চুল বেঁধে দেয়। জামা, জুতো, টিফিন ঠিক করে দেয়। কিন্তু আগের মত গল্প পড়ে শোনায় না। পড়ালেখা দেখিয়ে দেওয়ার আগ্রহ ও চলে গেছে মনে হল। ও কি আমার উপরে রাগ করেছে? আমি আবার একা একা থাকি আমার মত। স্কুল থেকে আগে আগে নিয়ে আসে। তারপরে ওর মত ও ঘুমায়। টিভি দেখার জন্য বকা দেয় না। একদিন রাতে ও শুয়ে আছে। আমি গেলাম ওর কাছে একটা বই নিয়ে। ‘আমাকে এই গল্পটা পড়ে শোনাবে?’
‘আমার মাথা ধরেছে’ বলে ও উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়ল। আমি দিদার কাছে গিয়ে নালিশ করলাম। দিদা ছিল রান্না ঘরে। ‘আমাকে বই পড়ে শোনাবে? মাকে বলেছিলাম, ওর নাকি মাথা ব্যাথা।’
‘আমি কি চোখে দেখি নাকি রাতের বেলা ঠিক মত? দুদিনের ঢং দেখিয়ে বাচ্চাটার মাথা খারাপ করার কি দরকার ছিল? পর কখনো আপন হয়? আর আমার ও তো জ্বালা। ভেবেছিলাম বুড়ো বয়সে গত কয়েকবছর ধরে যে কষ্ট করছি, এখন একটু আরাম হবে। সে তো ভুলেও রান্না ঘরে উঁকি দেয় না। এখন তো শুনছি আবার চাকরিও নাকি করবে। ‘
আমি ওর কথা কিছুই বুঝলাম না, মন খারাপ করে দিদার বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম। ভাবছিলাম বাবাকে বলব বই পড়ে শোনাতে, কিন্তু ওদের রুমের সামনে যেয়েই শুনলাম মা আর বাবা হাসাহাসি করছে। কারো মাথা ব্যাথা করলে বুঝি এতো খিলখিল করে হাসে? বিছানায় এসে কাঁদতে শুরু করলাম। লিজের কথায়ই হয়তো ঠিক। স্টেপ মমরা এমনই হয়। সেই রাতে কেন যেন আমার অসুস্থ মায়ের কথা খুব মনে হচ্ছিল। ওকে কবে দেখতে যাব কে জানে? হটাত ভয় লাগল, সাবিনা যদি যেতে না দেয়?
স্কুলে ও আমার ভালো লাগতো না, যদিও এখন, জামা, জুতা পরিষ্কার। চুল বাঁধা। কেউ কেউ আমার সাথে এখন খেলে। কিন্তু পড়া পারি না বলে টিচাররা বিরক্ত। ক্লাসে মনোযোগ থাকে না। আমি কী করব? ওদের বকা ঝকা খেয়ে আমার মেজাজ আরও খারাপ হতে থাকে। একে ধাক্কা দেওয়া, ওর চুল টানা এসব আমার নিত্য দিনের অভ্যাস হয়ে গেছে। একদিন এক বড়সড় মারামারির জের হিসেবে বাড়িতে চিঠি আসল স্কুল থেকে। বাবা আর দিদা গম্ভীর মুখে সেই চিঠি নিয়ে বসে থাকল দিদার ঘরে। আমি বাইরে দাড়িয়ে সবই শুনলাম। ‘হৃদির স্কুল থেকে বলেছে, ডাক্তারের চিঠি আনতে হবে। অনেক বাচ্চার মাত্রাতিরিক্ত অস্থিরতা থাকে। ওর সেটা আছে কিনা ডাক্তার দিয়ে দেখাতে হবে আর থাকলে কিভাবে ঠিক করবে সেই প্ল্যান দেখাতে। নাহলে ওকে স্পেশাল কোন ক্লাসে দিতে হবে। এই স্কুলের এই ক্লাসে রাখা যাবে না।’
দিদা বলছে ‘অন্য স্কুলে দিয়ে দে। যতসব ঢং। বাচ্চারা মারামারি করেই। ‘
‘মা ও জিনিস ছুঁড়ে। ‘
‘তোরাও ওরকম করতি।’
‘লেখাপড়ায়ও অনেক পিছিয়ে আছে।’
‘স্কুল বদলালেই ঠিক হয়ে যাবে। ওর উপর দিয়ে তো আর কম গেল না।’
‘মা এটা বাংলাদেশ না। বললেই স্কুল বদলান যায় না। ওরাও এই চিঠি চাইবে।’
‘যা ভালো বুঝিস কর, আমার আর কি?’
আমি ওদের কথার ফাঁকেই দৌড়ে গেলাম মায়ের কাছে। ওকে জড়িয়ে ধরে কোলের মাঝে মুখ গুঁজে বললাম ‘আমি কিছুতেই অন্য স্কুলে যাব না। অন্য বাচ্চারা আমাকে মারবে। তুমি আমার টিচারকে, বাবাকে আর দিদাকে বল।’ আমার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না দেখে মা অবাক হয়ে গেল। ও কিছুই জানত না। খালি আমাকে অনেক আদর করে দিয়ে ও বলল ‘আমি সবার সাথে কথা বলব। তবে আমার কথা কেউ শুনবে কিনা জানি না।’
আমি কাঁদতে কাঁদতেই বললাম ‘আমাকে তাহলে আমার অন্য মায়ের কাছে দিয়ে আস।’
একথায় ও আমাকে আরও জোরে চেপে ধরে বলল ‘পাগল, আমার তাহলে কি হবে?’
ও বাবা আর দিদার সাথে কী কথা বলেছিল আমি জানি না, কিন্তু কয়েকদিন পরে বাবা আর মা আমাকে একজন হাসি খুশি ‘গল্প’ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। হ্যাঁ, মা আমাকে এই নামটাই বলেছিল। ‘গল্প’ ডাক্তারের সাথে সব সত্য কথা বললে আর প্রান খুলে গল্প করলে নাকি সব রাগ চলে যায়, পড়ালেখায় মনোযোগ আসে। ও আমাকে কোন ইনজেকশন বা ব্যাথা দেবে না, খালি মাঝে মাঝে গল্প করবে। ডাক্তারটাকে আমার ভীষণ ভালো লাগল। আমার আঁকা ছবি দেখে এতো প্রশংসা করল। আমি কোন খেলাধুলা করি কিনা জানতে চাওয়ায় আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম ‘আমার খুব বাস্কেট বল খেলার শখ।’ ওকে আমার দুইটা মায়ের গল্প করলাম। দিদার গল্প। আমার যে তেমন একটা বন্ধু নেই এটা বলতে লজ্জা লাগছিল। আর আমি অনেক টিভি দেখি আর গেইম খেলি শুনে ও জানতে চেয়েছিল এর বদলে আর কী করতে আমার ভালো লাগবে। গল্প শেষই হচ্ছিল না। আমরা কয়েকবার গেলাম ওর কাছে।
গল্প ডাক্তারটাকে আমার আর মায়ের খুব ভালো লাগলেও, বাবা মনে হল একটু বিরক্ত।
মাকে একদিন বলতে শুনলাম ‘হৃদির বাস্কেট বলের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আর আমি ছবি আঁকার ক্লাসের খোঁজ নিয়েছি। স্কুলেই হয়, সপ্তাহে দুদিন।’
বাবা দেখলাম বিরক্ত। ‘ আলাদা খরচ, সবচেয়ে বড় কথা প্র্যাকটিসে নেবে কে? আমার পক্ষে সম্ভব না।’
মা বলল ‘সম্ভব করতেই হবে, ডাক্তার বলেছে, এসবের মধ্যে দিয়েই ওর মনোযোগ আসবে। সব সমস্যা সমাধান হবে।’
‘তুমি তো বলেই খালাস, বলা তো সহজ। তোমাকেই এখনো সব জায়গায় নিয়ে যেতে হয়। ‘
মা দমে গেল না। ‘পাশের বাসার ডীনের সাথে যাবে। আমি তো ড্রাইভিং প্র্যাকটিস করছি। লাইসেন্স হয়ে গেলে তোমাকে আর ভাবতে হবে না।’
‘তোমার চাকরি খুঁজার কী হবে?’
‘সেটা দেখা যাবে। আমাদের মেয়েটার সারা জীবন পড়ে আছে। এখনি সেটা নষ্ট করো না।’
আমি মনে মনে দোয়া করছিলাম মা যেন জিতে যায়। সেদিন দিদারও শরীর খারাপ ছিল বলে সারাদিন শুয়েই ছিল । আমার জীবনে এই ঘটনাগুলো মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
আমার জীবনটা সম্পূর্ণ অন্য রকম হয়ে গেল। সপ্তাহে দুই তিন দিন আমি বাস্কেট বল খেলতে যাই। খেলতে গিয়ে নতুন নতুন বন্ধু হল। খেলতে গিয়ে দৌড়াও, লাফাও এমনকি একটু আধটু ধাক্কাধাক্কি করলেও কেউ রাগ হয় না। প্রতিটা প্র্যাকটিসে মা পাশে বসে থাকে। পানির ফ্লাক্স নিয়ে, ফল নিয়ে আসে। আমাকে ছবি আঁকার ক্লাসেও ভর্তি করে দিয়েছে। স্কুলের পরে দুই দিন স্কুলেই ক্লাস হয়, ছবি আঁকতে আমার সব সময়ই খুব ভালো লাগত। বাবা আর মা কি সুন্দর সুন্দর সব কালার কিনে দিয়েছে। খেলা, ছবি আঁকা, স্কুল সব কিছু নিয়ে আমি এতো ব্যস্ত যে আমার আর এখন আসলে টিভি দেখার তেমন একটা সময়ই নেই।
মা আমাকে কত যে গল্প পড়ে শুনাত। মাঝে মাঝে নিজেও বলত। সব গল্পের মাঝেই একটা ছোট বাচ্চা কেমন করে অনেক ভালো কিছু করে ফেলে সেসব গল্প। আর গল্পের শেষে আমাকে বলত, ‘হৃদি, ছবি আঁকতে গিয়ে তুমি কি সুন্দর মনোযোগ দাও। একটুও নড়াচড়া কর না। অস্থিরতা নেই। পড়ালেখাকে যদি সেভাবে ভালবাস, তাহলে সেটাও তুমি মনোযোগ দিয়ে করতে পারবে। সবার আগে তোমাকে পড়ার মজাটা পেতে হবে। ‘ প্রথমে আমার বিশ্বাস হত না। পরে কথাগুলো বার বার শুনে যেন মনে গেঁথে গেল। ‘গল্প’ ডাক্তার মাকে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য নাকি অনেক ধরনের খেলা, বই এগুলোর কথা বলে দিয়েছিল। আমরা সময় পেলেই সেই সব খেলায়, বইয়ে সময় কাটাতাম। মা, বাবাকেও টেনে আনত। ছুটির দিনে ওরা সবাই মিলে আমার খেলা দেখতে যেত। ওদেরকে খুশি করার জন্য আমি প্রাণপণে চেষ্টা করতাম।
দিদার উপরে চাপ আরও বেড়ে গেছে। খালি আমার জন্য এটা সেটা রান্না কর। মাকে জোড় করে, বকা দিয়েও রান্না ঘরে ঢুকাতে পারে নি। এখন ওর বকা শুনলে মা হাসে। ‘আর কত চেষ্টা করবেন মা? আপনি তো রবার্ট ব্রুস হয়ে যাবেন। তবুও আমাকে দিয়ে এই কাজ হবে না। ‘
যেদিন আমি ম্যাথ ক্লাস টেস্টে দশে দশ পেলাম, আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। স্কুল থেকে মা নিতে এসেছে, ওকে দেখালাম খাতা। ওখানেই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খাওয়া শুরু করল। ওর খুশি দেখে মনে হচ্ছিল ওই দশে দশ পেয়েছে।
বাবাকে তখনই ফোনে জানানো হল।
‘আমি বলে ছিলাম না তুমি পারবে? এখন বিশ্বাস হল? ‘
আমি মাথা নাড়লাম, হয়েছে।
আমার আরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে, বড়দের দেখলে সালাম দিতে হয়, জিজ্ঞেস করতে হয় ‘কেমন আছো?’ আমি এখন সেটাও জানি। চিৎকার করি না, জিনিস ছুঁড়ে মারি না। প্রতদিন গোসল করি, লোশন দেই।
বাবা একদিন অফিস থেকে এসে চিৎকার, ডাকাডাকি শুরু করল। আমরা সবাই একসাথে না হওয়া পর্যন্ত বলবে না কী হয়েছে। অবশেষে জানা গেল, আমরা বাংলাদেশে যাচ্ছি। মায়ের মুখ খুশিতে ঝলমল করছে। সবচেয়ে খুশি দিদা। ওর আর এই বিদেশের জীবন ভালো লাগছে না। কেবল আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি কখনো বাংলাদেশে যাই নাই। বাংলা বলা একটু একটু শিখেছি। কিন্তু সেটা দিদাই কষ্ট করে বুঝতে পারে। আমার ভয় দ্বিগুণ বেড়ে গেল যখন শুনলাম বাংলাদেশে গিয়ে বাবা, মায়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। ওখানে সব অপরিচিত মানুষের মাঝে আমাকে যদি ওরা ভুলে যায়। এটা নিয়ে মনে হল দিদাও একটু চিন্তিত।
‘তুমি ভেবো না, দাদু ভাই। তোমাকে যদি না নেয়, আমিও যাব না। ‘
‘আমাকে নেবে না কেন?’
দিদা আমার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না। আমতা আমতা করল ‘ওখানে নিয়ম আলাদা, মানুষ অনেক কথা বলে।’ আমি কিছু বুঝলাম না, কিন্তু আমাকে নেবে না এই চিন্তায়ই আমি বেশী অস্থির ছিলাম নতুন জায়গায় যাওয়ার উত্তেজনার চেয়ে।
দিদার মুখে বাংলাদেশের অনেক গল্প শুনেছি। শুনে শুনে জায়গাটা সম্পর্কে আমার একটা ধারনা ছিল। কিন্তু আমি জানতাম না ওখানে যেয়ে আমাকে স্পেশাল পানি খেতে হবে। কিংবা, মশার কামড়ে আমার সারা শরীর ফুলে যাবে। আর ভয় লাগল যখন দেখলাম আমি আর বাবা দিদার সঙ্গে এক বাসায় গেলাম আর মা গেল অন্য একজন লোকের সঙ্গে অন্য বাসায়। ও যদি আর না আসে? সেদিন রাতে ঘুম হল না।
পরদিন সকালে আমার সব ভয়কে দূর করে মা চলে আসল এই বাসায়। আমি দৌড়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরলাম ‘তুমি কোথায় ছিলে আমাকে ছেড়ে?’
‘বারে , আমার বাবার কাছে। ‘
‘তোমার ও একটা বাবা আছে?’
‘আছে তো, ওকে কতদিন পরে দেখলাম। ওর শরীর খারাপ, তাই কোথাও যেতে পারে না। তবে আজ তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে। কাল তো অনুষ্ঠান, তুমি আমার সঙ্গে থাকবে।’
‘আর আমি?’ বাবাও কেমন লজ্জা পেয়ে বলল।
মা কি বাবাকে চোখ পাকাল, বুঝি নাই।
ওদের বাসায় যেয়ে, মা প্রথমেই আমাকে ওর বাবার কাছে নিয়ে গেল ‘বাবা তোমার নাতনিকে নিয়ে এলাম।’
ওর বাবা আমাকে কাছে টেনে নিল ‘আসো নানা ভাই।’ সারাটা দিন ভালোই কাটল। নানাভাই আমার জন্য একটা পাখি কিনে এনেছিল, সেটা আবার কথা বলে। মার সঙ্গে শপিঙে গেলাম। রাত যতই আগাচ্ছে, ততই ভয় বাড়ছে। কাল সেই অনুষ্ঠান, আমাকে যদি না নেয়? আমাকে কি এই অপরিচিত বাসাটায় একা থাকতে হবে? দিদা আমাকে এই বাসায় আসতে দিতে খুব একটা রাজি ছিল না।
বাবা বলছিল আমাকে আলাদা ঘুমাতে আজ। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছিলাম নতুন জায়গায়, তাই মা ওদের সঙ্গেই নিল।
ভোরে ঘুম ভেঙ্গে বিছানায় উসখুস করছি। মা, বাবা উঠে গেছে আগেই। একা একা উঠতে ঠিক ইচ্ছে করছে না। বাসার মত জোরে ডাকতে গিয়েও থেমে গেলাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। মা এসে বলল ‘চোখ খোল হৃদি মণি। সারপ্রাইজ আছে।’
চোখ খুলে দেখি মায়ের এক হাতে একটা শাড়ি, আর আরেক হাতে একটা ঝলমলে লেহেঙ্গা, দুটোর রঙই এক।
‘এটা কার?’
‘আমার আর তোমার, আজ রাতে আমরা পরব। ‘
আমি খুশিতে বিছানার উপরেই কয়েকটা লাফ দিলাম, তার পরে মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
‘হয়েছে ,হয়েছে। তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে গোসল সেরে নাও। হাতে অনেক কাজ। দুপুরে খেয়ে দেয়ে পার্লারে যেতে হবে।
পার্লার জিনিসটা কী আমি জানি না। ওরা আমাকে আর মাকে সাজিয়ে দিল। কিন্তু আমার ভালো লাগছিল না একদম। মায়ের নাকি আমাকে খুব সুন্দর লাগছে। ও বলে দিয়েছে আমাকে কিভাবে চুল বেঁধে দেবে এইসব।
আজ নাকি বাবা, মায়ের রিসেপশন।
আমি, বাবা, মা আর দিদা এক গাড়িতে গেছি। ও, নানা ভাইটাও ছিল আমাদের গাড়িতে।
গাড়ি থেকে নামার পর, দিদা বলল ‘হৃদি আমার সঙ্গে থাক। তোমরা দুই জন যাও।’
মা বড় বড় চোখ করে দিদার দিকে তাকিয়ে বলল ‘না মা, আমাদের মেয়ে আমাদের সঙ্গেই থাকবে।’
দিদা মনে হল একই সঙ্গে খুশি আর অবাক হয়েছে।
বাবা আর মায়ের জন্য গেইট ধরা হয়েছে। সেই গেইট দিয়ে আমরা তিনজন ঢুকলাম। ছবি তুললাম। চারিদিকে খালি অবাক দৃষ্টি। ফিসফিস কথা।
ভেতরে ঢোকার পর, দু তিন জন বয়স্ক মহিলা এসে মাকে বলল ‘তোর কী আর আক্কেল জ্ঞান হবে না কখনো? আজ এই এতো লোকের মাঝে বাচ্চা এটাকে সাথে নিয়ে ঘোরার কি আছে? সবাই মজার এক আলোচনার বিষয় পেয়েছে।’
‘ফুপ্পি, ওদের সব্বাইকে যেয়ে বলে দাও, এটা আমার মেয়ে, জন্ম না দিয়েও অনেক সময় মা হওয়া যায় আর কেউ কেউ জন্ম দিয়েও মা হয় না।’
চলবে…