Bangla ArticlesBangla StoryStory (Writer)

ছেলে বেলার ডায়েরী (পর্ব-১ম)

ছেলে বেলার ডায়েরী (পর্ব-১ম)

 

বাবার বিয়ে
আমার বাবা যখন আমার মাকে বিয়ে করে
তখন আমার বয়স পাঁচ। বুঝতেই পারছেন আমি
আমার দ্বিতীয় মায়ের কথা বলছি। বিয়ের
কয়েকদিন আগে নতুন মা আমার জন্য একটা
খুব সুন্দর ড্রেস পাঠিয়েছিল। ফোলা ফোলা
গোলাপি ড্রেসটা অবিকল টিভিতে দেখা
প্রিন্সেসদের ড্রেসের মত। কে পাঠিয়েছে
তখন বুঝি নি। কিন্তু ড্রেসটা এতোই পছন্দ
হয়ে গিয়েছিল যে সারারাত ওটা বুকে
নিয়ে ঘুমিয়েছি।
দ্বিতীয় বিয়ে বলে হয়তো বাড়িতে তেমন
কোন আয়োজন ছিল না। বিয়ের আগের
রাতে দিদা আমাকে ধরে অনেক কাঁদল।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম
কেন কাঁদছ? দিদা সেকথার উত্তর দেয় নি।
মা চলে যাওয়ার পর থেকে গত দুবছর দিদাই
আমার দেখা শোনা করে। আমি দিদার
সঙ্গেই বেশিরভাগ সময় ঘুমাই। শুধু বছরে
দুবার যখন মায়ের সাথে দেখা করতে যাই,
তখন মায়ের সঙ্গে ঘুমাই। মায়ের গায়ের
গন্ধটা কি মিষ্টি। আমার ইচ্ছা করে সব
সময় সেই গন্ধটা পেতে। কিন্তু এক সপ্তাহ
পরেই বাবা এসে আমাকে নিয়ে যায়।
মায়ের নাকি কি একটা অসুখ আছে।
ডাক্তার নিষেধ করেছে মায়ের কাছে কোন
ছোট বাচ্চা রাখতে। এটা কোন কথা হল?
আমার সব বন্ধুই তো ওদের মায়ের সাথে
থাকে। তাহলে আমার বেলায় কেন উল্টো
নিয়ম? আমি ঠিক করেছি বড় হয়ে একদিন
মায়ের কাছে পালিয়ে চলে যাব। মাকে
ছেড়ে থাকতে আমার ভাল লাগে না।
সবচেয়ে পচা লাগে যে আমার বাসায়
আমার কোন মা নেই।
বাবার বিয়ের দিন সকালে দিদা আমাকে
গোসল করিয়ে ড্রেসটা পরিয়ে দিল। আমার
লম্বা চুল ঠিক মত আঁচড়াতে পারে না
দিদা। জট ছাড়াতে গেলে ভীষণ ব্যাথা
দেয়। এমনিতে আমি কাঁদলেও মাঝে মাঝে
জোর করেই চুল আঁচড়ায়, সেদিন কেন যেন
জোর করল না। বের হওয়ার সময় একবার চোখ
মুছতে দেখেছি ওকে। বাবাকে ভীষণ সুন্দর
দেখাচ্ছিল। আমি জানি না আমরা কোথায়
যাচ্ছি। গাড়িটা এসে একটা বিরাট হলঘরের
মত জায়গায় থামল। মনে হল বড় কোন
পার্টি। এতো লোক দেখে আমার একটু ভয়
লাগছিল। আমি বাবার হাতটা শক্ত করে
চেপে ধরলাম। দিদা আমাকে নিতে চাইল,
আমি বাবাকে ছাড়লাম না। বাবা যেয়ে
একটা বড় চেয়ারে বসল, অনেকটা রাজারা
যেমন চেয়ারে বসে। আমি অবাক হয়ে
দেখলাম তার পাশেই আরেকটা চেয়ার
রাখা আর সেই চেয়ারে একজন রানির মত
সুন্দর মেয়ে বসে আছে। ভীষণ সুন্দর। আমার
লজ্জা লাগছিল বলে মুখ ঢেকে উঁকি
দিচ্ছিলাম। মেয়েটা আমার দিকে মিষ্টি
করে হেসে বলল ‘তোমার কি এই ড্রেসটা
ভালো লেগেছে?’
আমি মাথা কাত করে বুঝালাম হয়েছে।
সে তখন বলল ‘তুমি কি জানো এটা
তোমাকে কে দিয়েছে?’
আমি এইবার মাথা নেড়ে বুঝালাম জানি
না।
‘আমি দিয়েছি। তুমি যদি আমার কাছে আস
তাহলে আমি তোমাকে এরকম আরও সুন্দর
সুন্দর ড্রেস দেব।’
আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করে আস্তে আস্তে
ওর কাছে গেলাম। ওর গয়না গুলো নেড়ে
চেড়ে দেখছিলাম। এক ফাঁকে সে আমাকে
কোলে নিয়ে নিল।
আমি তখনও বুঝি নি যে আমার জীবনে এক
বিরাট পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে।
আমরা তিনজন ছবি তুললাম। খেতে বসলাম
একসাথে। আমাকে সাধারণত দিদা খাইয়ে
দেয়। আমি যে নিজে খেতে পারি না, এটা
সে কেমন করে যেন বুঝে গেল। আমাকে
সাহায্য করতে চাইল। কিন্তু আমার আর
কারো কাছে খাওয়ার অভ্যাস নাই। তাই
কিছু খেলাম না।
ফেরার পথে গাড়িতে ওকে উঠতে দেখে
অবাক লাগছিল, এই মেয়েটা আমাদের
বাসায় বেড়াতে যাচ্ছে। বেশ মজা হবে
তো।
কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না। যখন ঘুম ভাঙল
দেখি আমি দিদার বিছানায়। বাসায়
অনেক মানুষ। বাবার বন্ধুরা এসেছে। সবাই
মিলে বাবার ঘরের বিছানাটা ফুল দিয়ে
সাজিয়েছে। সেখানে সেই মেয়েটা বসে
আছে। আমি দিদাকে খুঁজে বের করলাম।
নামাজ পড়ছিল।
‘দিদা আমার খিদে পেয়েছে।’
আজ বাসায় পোলাও রান্না হয়েছে। দিদা
আমাকে যখন খাইয়ে দিচ্ছিল, আমি জানতে
চাইলাম ‘বাবার ঘরে বসে আছে মেয়েটা
কে দিদা?’
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দিদা বলল ‘তোমার
মা।’
আমি অবাক হয়ে গেলাম। হেসে বললাম ‘না
দিদা, তুমি কি ভুলে গেছ? আমার মা তো
আইরিন। ‘
দিদা আরও গম্ভীর হয়ে গেল। ‘এটাও তোমার
মা।’
‘কারো বুঝি দুইটা মা হয়?’
দিদা এবার কেঁদে ফেলল ‘কারো কারো হয়।’
‘নতুন মাটার নাম কী?’
‘ সাবিনা।’
খাওয়া শেষে আমি বাবার খোঁজে গেলাম।
গিয়ে দেখি ওর রুমের দরজা বন্ধ। ধাক্কা
দিতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর বাবা দরজা
খুল্ল। ‘কী হয়েছে?’
‘আমি সাবিনাকে চাই না। আইরিনকে চাই।

বাবা কি রাগ হল? আমি বুঝতে পারি নাই।
কিন্তু ততক্ষণে দিদা এসে আমাকে কোলে
তুলে ওর রুমে নিয়ে গেল।
আমি শুয়ে শুয়ে কানতে থাকলাম ‘আমি
বাবার সাথে ঘুমাব।’
আমার কান্না দেখে দিদাও কাঁদছে। মুখে
বলছে ‘তুমি তো বাবার সাথে ঘুমাও না
কখনো। আজ কেন এমন করছ?’
‘কে বলেছে জ্বর হলে ঘুমাই তো। দেখ আমার
জ্বর এসেছে।’
দিদা আমাকে কিছুতেই মানাতে পারছিল
না।
আমার কান্নার মাঝেই অবাক হয়ে দেখলাম
নতুন মা উঠে এসেছে। দিদাও খুব অবাক
হয়েছে। মনে হল একটু ভয়ও পেয়েছে।
কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল ‘কী
হয়েছে রাজকন্যাটার? কাঁদছে কেন?’
‘আমি আমার বাবার সাথে ঘুমাতে চাই।’
ও আমার গাল টিপে দিয়ে বলল ‘এই কথা?’
বেশ তো। ‘
তারপরে আমার কানের কাছে মুখ এনে
ফিসফিস করে বলল ‘আমরা সবাই যদি এখন
ওই ঘরে চলে যাই, দিদা মন খারাপ করবে
তো। ভাববে তুমি ওকে আর পছন্দ কর না।
তুমি আজ এখানে ওর সাথে ঘুমাও, কাল
আমি ওকে বুঝিয়ে বলব। আর তাছাড়া
তোমাকে যে গল্পগুলো পড়ে শোনাব সেই
বইটাও খুঁজে বের করব কেমন? এখন আমি
তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, তুমি
ঘুমিয়ে পড়।’
ওর কোলের মধ্যেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
আমার নতুন মা, জানিনা কত রাতে সেদিন
সে তার বাসর ঘরে গিয়েছিল।
সকালে ঘুম ভাঙল সাবিনার ডাকে। পেছনে
বাবাও আছে। সাধারণত দিদা আমাকে
ডাকে। আজ ওকে কোথাও দেখলাম না।
আমি চুপ করে শুয়ে থাকলাম। দিদাকে
ছাড়া আমি উঠবো না বিছানা থেকে।
বাবার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ভয়
পেয়েছে। সাবিনা কি বাবাকে বকা
দিয়েছে নাকি? এসব যখন ভাবছি, সাবিনা
এসে আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল ‘গুড
মর্নিং প্রিন্সেস। নাস্তা খাবে না? ‘
আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম ‘না, আমার খিদে
পায় নি।’
‘ঠিক আছে। খিদে তো নাই পেতে পারে।
কিন্তু বাবাকে দিয়ে যে আমি প্যান কেক
আনালাম, সব গুলো প্যান কেক কি আমি
একাই খেয়ে ফেলব?’
প্যান কেকের কথা শুনে আমি উঠে বসলাম,
আমার খুব প্রিয়। সাবিনা যদি সত্যি সত্যি
সব খেয়ে ফেলে। কিন্তু আমি তো এখনো
দাঁত ব্রাশ করি নি।
ওই আমাকে বলল ‘চল মুখটা ধুয়ে দেই।’
আমি ঘাড় গুজে থাকলাম। ‘তুমি না, দিদা
বা বাবা।’
একটু পরে ও দিদাকে ডেকে দিল আর
আমাকে বলল ‘দিদা মুখ ধুয়ে দিচ্ছে, কিন্তু
চুলটা আমি বেঁধে দেব, আমি অনেক ভাবে
চুল বাধতে জানি।’
দিদা যখন আমাকে নিয়ে যাচ্ছে ও কেন
যেন বাবাকে আস্তে করে বলছিল ‘জলদি
দোকানে যাও প্লিজ, মুখ ধুয়ে চুল বাঁধতে
বাঁধতে নাস্তা রেডি রাখতে হবে।’
……….
চলবে….!!!.

সাথেই থাকুন সবাই। পরের পর্ব টা তারাতারি দিয়ে দিবো।।।

Mohona Islam

Love, Sci-fi, Tech, Story Writer.

Related Articles

Back to top button
error: Alert: Content is protected !!