একটি মেয়েকে এনে তার নিজের শয্যায় রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে আছে

একটি মেয়েকে এনে তার নিজের শয্যায় রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে আছে
মিতুর স্বামী ইয়াকুব অন্য একটি মেয়েকে এনে তার নিজের শয্যায় রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে আছে । বাবার বাড়ি থেকে একদিন আগে চলে আসায় এই দৃশ্যটি তাকে দেখতে হলো।
সকালেও বাবা তাকে আরেকটা দিন থেকে যেতে বলেছিলো। কিন্তু, সে ইয়াকুবকে চমকে দিবে বলে একদিন আগেই চলে এসেছিলো। কিন্তু, বাড়ির সামনে আসার পর দেখে ঘরের দরজা হালকা করে ভেজানো। সেই দরজা একটু ফাঁক করতেই ভেতর থেকে সে একটি মেয়ের গোঙ্গানির মৃদু শব্দ শুনতে পেলো। শব্দটি অনুসরণ করে সে আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে চলে গেলো শয়নকক্ষের সামনে। সেখানে সে দেখতে পেলো ইয়াকুব অন্য এক মেয়ের সাথে রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে আছে।
দৃশ্যটি দেখে বেশ কিছুক্ষণ পাথরের মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর, আবার পা টিপে টিপে আবার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে সে আবার ফেরত চলে আসলো পতেঙ্গায়, তার বাবার বাড়িতে।
মেয়েকে আবার ফেরত আসতে দেখে বাবা নাসির আলী জিজ্ঞেস করলেন, ক্যান অইয়্যেদে মা,আই গেইয়্যুস দে? (কিরে মা, চলে আসলি যে?)
মিতু ম্লান হাসি হেসে বললো, বাবা ইতে কামত বাদ্দি গেইয়্যি,কালুয়া ঘরত আইবু। (বাবা, ও কাজে বাহিরে গিয়েছে। আগামীকাল বাসায় আসবে।)
মেয়ের মুখ দেখে কিছু বুঝতে পারলেও তিনি আর কিছু বললেন না। মেয়ের হাত থেকে লাগেজটা নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।
নিজের কক্ষে ঢুকে মিতু দরজা বন্ধ করে দিলো। ধীর পায়ে দক্ষিণের খোলা জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বসন্তের দখিনা বাতাস তাকে ছুঁয়ে দিলো। আনমনা হয়ে সে ভাবতে লাগলো তার জীবনের কথা।
দশবছর আগে এরকমই এক বসন্তের দিনে মারা যায় তার মা। মায়ের মৃত্যুর একবছরের মধ্যে বাবা আরেকটি বিয়ে করে। নতুন মা প্রথম প্রথম তাকে অনেক আদর করতো। কিন্তু সেই আদর বেশিদিন স্থায়ী হলোনা। নতুন মা যেদিন গর্ভবতী হয়, সেদিন থেকে সে হয়ে উঠে নতুন মায়ের চোখের বিষ। এরপর থেকে এই সংসারে সে মেয়ে থেকে পরিণত হয় কাজের মেয়েতে। সেই আট বছর বয়সে মিতু বুঝে যায়, তার মুক্তির পথ তার নিজেকেই বের করে নিতে হবে। এবং সেই মুক্তি এনে দিতে পারে শিক্ষা। এই বুঝ হবার পর থেকে দুঃখবোধকে একপাশে রেখে সে ঘরের কাজ ও পড়াশোনা দু’টি সমান তালে করে যায়। কিন্তু, বিপত্তি বাঁধে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পর যখন সে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো কলেজে ভর্তি হবার, ঠিক তখন তার সৎমা তার বিবাহ ঠিক করে ফেলে। বাবাও এতে কোনো প্রকার বাঁধা দেননি। ফলাফল, অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়। এরপর, নতুন সংসারে সে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করে। কিন্তু, সেই নতুন জীবনও তার জীবনে মুক্তি নিয়ে আসলোনা।
এখন সে চাইলে বিবাহ বিচ্ছেদ করে ফেলতে পারে, তাতে ভালো কিছু হবেনা। বাবার সংসারে এসে আগের চেয়ে আরো খারাপ অবস্থায় পড়বে সে। আবার সে চাইলেই পারে স্বামীর সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে। কিন্তু, তাতে সম্পর্কে তিক্ততা চলে আসবে। এক্ষেত্রে স্বামী আরো বেপরোয়া হয়ে যাবে, তাতে স্থিতিশীল যে আবহাওয়া আছে তা নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে সে কী করবে?
এই প্রশ্নের উত্তর ভাবতে ভাবতে সে সিদ্ধান্ত নিলো এই সংসার সে করবে। তবে, পড়ালেখা আবার শুরু করবে। তারপর, উচ্চমাধ্যমিক শেষে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে ইয়াকুবের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করবে। এরপর শুরু হবে তার নতুন জীবন। যেই জীবনের পুরোটাই রচিত হবে তার নিজের তুলির আঁচড়ে।
এই সিদ্ধান্ত নিয়েই সে তার কষ্টটাকে চাপা দিয়ে স্বাভাবিক জীবন শুরু করলো। বাবার বাড়িতে একদিন থেকে পরের দিন চলে গেলো স্বামীর বাড়িতে।
মিতুকে দেখে ইয়াকুব সন্তুষ্টির হাসি হেসে বললো, তুমি যাওয়ার পর ঘরটা কেমন যেনো খালি লাগছিলো। তুমি এসে ঘরটা পূর্ণ করে দিলে।
মিতু ইয়াকুবের দিকে স্মিত হাসি হেসে বললো, বাবা আরো কয়েকটা দিন থেকে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু, আপনাকে দেখার জন্যে ভেতরটা কেমন যেনো অস্থির হয়ে উঠছিলো। তাই, চলে এলাম।
এটুকু কথা বলে মিতু চলে গেলো শয়ন কক্ষে। তারপর, নিজের সবকিছু গুছিয়ে রেখে স্নানঘরে ঢুকে পড়লো। দীর্ঘ একঘন্টা স্নান করে নীল শাড়ি পরে বের হলো সে বের হলো স্নান ঘর থেকে। ইয়াকুব তখন মোবাইলে কথা বলছিলো। হঠাৎ মিতুর উপস্থিতি টের পেয়ে সে কিছুটা হকচকিয়ে গেলো। তারপর, মিতুর দিকে কোন প্রকার নজর না দিয়েই ফোনে কথা বলতে থাকলো।
মিতু অবচেতন মনে চেয়েছিলো ইয়াকুব যেনো তার শাড়ি পরা নিয়ে কিছু বলে। কিন্তু ইয়াকুব সেদিকে ঠিক ভাবে লক্ষ্যও করলোনা। বিষয়টিতে তার ভীষণ মন খারাপ হলো। কিন্তু, সে সেই মন খারাপটাকে গোপন করে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে স্মিত হাসি হেসে বললো, চা খাবেন?
ইয়াকুব বললো, তুমি বানাবে?
মিতু মুখে সেই স্মিত হাসি রেখে বললো, গোসল শেষে চা খেলে আরাম লাগে। শরীরটা ঝরঝরা হয়ে যায়।
মিতুর কথা শুনে ইয়াকুব বললো, তাহলে দাও।
মিতু আর কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো রান্নাঘরে। রান্নাঘরে ঢোকার পর তার কান্না পেয়ে গেলো। অনেক কষ্টে সে নিজেকে সামলে নিয়ে বোঝালো, লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আমাকে অভিনয়টা করতেই হবে। কিছু পাবার জন্য কিছু হারাতে তো হয়ই। আর আজ থেকে ও তোমার কেউ না। এখানের সব তুমি করবা শুধু নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য।
নিজেকে বোঝানো শেষে মিতু কড়া লিকারে চা বানালো। সেই চা দু’টি কাপে ঢেলে নিতে নিতে নিজেকে প্রস্তুত করলো তার কলেজে পড়ার কথা ইয়াকুবকে বলার জন্য। তারপর, চায়ের কাপ দু’টি নিয়ে চলে গেলো বারান্দায়। বারান্দায় গিয়ে সে ডাক দিলো ইয়াকুবকে। কিছুক্ষণ পর ইয়াকুবও চলে আসলো বারান্দায়।
বারান্দায় এসে ইয়াকুব জিজ্ঞেস করলো, কেমন কাটলো তোমার বেড়ানো?
মিতু স্মিতহাসি হেসে বললো, ভালো।
তারপর, দু’জনে নিঃশব্দে চা খেতে থাকলো।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে নিঃশব্দে কাটানোর পর মিতু নিজ থেকেই বললো, আপনার কাছে আমার একটা আবদার আছে।
ইয়াকুব খানিকটা বিষ্মিত হয়ে বললো, কী?
মিতু একটু থেমে কথা গুছিয়ে নিয়ে বললো, বাবার বাড়িতে যাবার পর দেখলাম আমার সব বান্ধবীরা পড়াশোনা করে। শুধু আমিই করিনা। তার উপর আপনি এতো বড় একজন ব্যবসায়ী। আপনার স্ত্রী হয়ে আমি এসএসসি পাশ। বিষয়টা আমার জন্য যতোটা অপমানজনক, আপনার জন্যও ঠিক ততোটাই অপমানজনক। তাই, আমি আবার পড়াশোনা করতে চাই। এতে করে আমি সারাদিনে কিছু একটাতে নিজেকে ব্যস্তও রাখতে পারবো। এর ফলে আমার মনও আগের থেকে ভালো থাকবে।
মিতুর কথা শুনে ইয়াকুব অবাক হলো খুব। অপ্রস্তুত অবস্থায় সে এসব যুক্তির বিপরীতে কোনো যুক্তি দিতে না পেরে বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। তবে, ঘরের কাজে যেনো কোনো ব্যঘাত না ঘটে।
মিতু হেসে বললো, আপনার কি মনে হয় আমি এই সংসারকে উচ্ছন্নে দিয়ে অন্য কিছু করবো।
মিতুর কথাটি শুনে ইয়াকুব হাসিমুখে বললো, না। তা তুমি কখনোই করবেনা জানি।
মিতু এ কথায় সন্তুষ্ট হয়ে বললো, আমি তো ভর্তি বিষয়ে ধারণা রাখিনা। আপনি একটু দেখে ব্যবস্থা করে দিয়েন।
তারপর, আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ভালোবাসার অভিনয়টাকে আরো বাস্তব সম্মত করতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইয়াকুবের ঠোঁটে চুম্বন এঁকে দিলো। এরপর, চায়ের কাপ দু’টি নিয়ে চলে গেলো রান্নাঘরে।
রান্নাঘরে এসে মিতুর নিজের উপর ঘেন্না এসে গেলো। ভালোবাসা ছাড়াই এই প্রথম সে কাউকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চুম্বন করেছে। এটা মনে করতেই তার মনে পড়লো, রাতে আবার এই মানুষটার সাথে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিলিত হতে হবে। কথাটি মাথায় আসতেই তার গা গোলাতে লাগলো। তখন সে নিজেকে বোঝাতে লাগলো,
আজকের এই কাজকর্ম কখনোই তার জীবনে চিরস্থায়ী দাগ ফেলবেনা। বরং, এই কাজকর্মের কারণে সে তার লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে।
দৌড় প্রতিযোগিতায় লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য দৌড়াতে হয়। সেই দৌড়াতে গিয়ে কত অঘটন ঘটে যায়। তারপরও, লক্ষ্যে পৌছাতে হয়। লক্ষ্যে পৌছে গেলে এই অঘটনগুলো মুছে যায়। কিন্তু লক্ষ্যে যদি পৌছানো না যায় তবে যতই পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা হোক না কেনো তা মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
ঠিক তেমনি জীবনের চলার পথে অনেকসময় অনেক কিছু করতে হয়। সেই সবকিছু নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছে যাওয়ার পর মুছে ফেলে নতুন করে শুরু করা যায়। কিন্তু, গন্তব্যে যদি পৌছানোই না যায় তবে লাভ কী?
আর, এই শরীরটা জীবনের সবকিছু না। শরীরকে পবিত্র রাখার জন্য নিজেকে ধ্বংস করে দেওয়ার কোনো মানেই হয়না। এক্ষেত্রে সবসময় মনে রাখা উচিত, জীবনের জন্য শরীর, শরীরের জন্য জীবন না।
তাই, লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য যা করার দরকার সব তাকে করতে হবে। একবার লক্ষ্যে পৌছে গেলে নতুন করে সবকিছু শুরু করা যাবে।
নিজেকে বোঝানো শেষে সে চায়ের কাপ দু’টি ধুঁয়ে নিলো। তারপর, একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে বললো,
আজ থেকে তোমার যুদ্ধ শুরু হলো। এই যুদ্ধে জেতার জন্য তোমার যা কিছু করার করবে। একবার যুদ্ধে জয়ী হয়ে গেলে তুমি তোমার নতুন জীবন ফিরে পাবে।
নিজেকে কথাগুলি বলে মিতু শয়নকক্ষে দিকে হেঁটে শুরু করলেও আসলে সে হাঁটা শুরুলো তার নতুন জীবন পাবার যুদ্ধের ময়দানের দিকে।
(চলবে…)
#নতুন_জীবন
#পর্ব_১
-জিসান রাহমান।