এই যে হ্যালো

এই যে হ্যালো
এই যে হ্যালো…..
-এদিক,ওদিক তাকাচ্ছে।
-এদিক ওদিক কি দেখেন? আমি আপনাকেই
বলছি।
-হুম বলুন।
-আপনি না আগে সামনে বসতেন প্রতিদিন
এখন পিছনে বসেন কেন?
-এমনি..
-আচ্ছা আপনি কি এই রকম ভাবেই কথা
বলেন?
-হুম।
-আপনি কি হুম হুম ছাড়া কিছু বলতে পারেন
না?
-হুম।
-হুম কি?
-হুম।
-ধ্যাত। (কেন যে ইচ্ছা করে কথা বলতে
আসছিলাম। মনে হইতাছে…) হন হনিয়ে চলে
আসলাম সেখান থেকে।
আমি ঋদ্ধি।সবথেকে দুষ্টু । সবাই আমার কাজ
কাম দেখে বজ্জাত মেয়ে বলেই জানে। আর
যায় সাথে কথা বলছিলাম সে হল
মি.স্বপ্লভাষী। খুব কম কথা বলে তাই এই নাম
তবে আলাদা একটা নাম আছে পুষ্প।
মি.স্বল্পভাষী হচ্ছে মোটা ফ্রেমের চশমা
পড়া একটু গম্ভির টাইপ। তবে ভালো ছাএ।
কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা
বলে না। আমরা সবাই যখন মজা করি তখন সে
শুধু তাকিয়ে মজা নেয় ।সবার শেষে ক্লাসে
আসবে এই তার নিয়মিত রুটিন।
আর এই যে আমি, মি. স্বল্পভাষী প্রেমে পড়ে
আমার বেহাল দশা।তাকে না দেখলে আমার
কোন কিছু তেই মন বসে না।
মি. স্বল্পভাষী প্রথমে সামনের দিকে বসতো।
আমি বসতাম ২য় লাইনে। সব সময় ওর দিকে
তাকিয়ে থাকতাম। এর ফলে আমার ফলাফল
যা হবার তাই হল।
এই ফলাফল দেখে স্যার রা তো পুরাই অবাক।
এখন থেকে আমাকে স্যাররা সামনের সিটে
ফিক্স করে দিয়েছে। আমি মনে মনে
ভাবলাম ভালোই হইছে সামনে থেকে দেখতে
পাবো। কিন্তু সে তো এখন পিছনে বসে তাই
আজ তাকে গিয়ে উপরের কথাগুলো বললাম।
এখন প্রথম দিনের ঘটনা বলি। সবাই এক সাথে
দাঁড়িয়ে মজা করছিলাম। এমন সময় একটা
ছেলেকে দেখলাম গেট দিয়ে আসতে। মাথা
নিঁচু করে আসছে। মজা করা জন্য এই ছেলেই
পারফেক্ট । ব্জ্জাত মেয়ে হওয়ার আমিই
গেলাম যেয়ে সরাসরি ধাক্কা … .
-আহহহহহহহ (আমি)
– সরি।
-মেয়ে মানুষ দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছা
করে?
-না।
-তাহলে ধাক্কা দিলেন কেন?
-কিছু না বলে এদিকে তাকিয়ে আছে।
-কি বয়রা নাকি কথা কানে যায় না ।
-কথা না বলে নিচে কি যেন খুজছে।
-দুর ঝগড়া করে কোন মজাই পাইতাছি না।
পরে বুঝতে পারলাম ছেলেটি চশমা খুজছে।
চশমাটা অনেক দুর গিয়ে পড়ছে তাই আমি
কুড়িয়ে দিয়ে যখন তাকে চশমা পড়াতে
গেলাম তখনই ঘটলো সব ঝামেলা।
কি সুন্দর চোঁখ। তার চোঁখের পাঁপড়ি গুলো
মাঝে কি যে আছে তা আমার মন ছাড়া কেউ
জানে না। কেন যে এই চোঁখগুলো চশমার
নিচে ডাকা থাকে । সেই থেকে ওর প্রেমে
পড়েছি আমি ।
এখন আমি দাড়িয়ে আছি ক্লাসে। সামনে
বসলে এই এক সমস্যা । শুধু প্রশ্ন করে। এরপর
মি.স্বল্পভাষীকে প্রশ্ন করল। সবার ধারনা
কেউ না পারলেও সে পারবে কিন্তু সবার
ধারনা ভুল হল যখন বলল -পারি না স্যার।
পরে স্যার বলল এই ক্লাসে কেও কি পারো।
তখন মি.স্বল্পভাষী পাশে থাকা মিলন বলে
ওঠলো উওরটা।
ক্লাসে শেষে বললাম -মিলন আসলেই তুই
জানতি প্রশ্নের উওরটা?
-দুর। এগুলা আমি জানবো কেমন করে। তকে
যখন স্যার প্রশ্নটা ধরলো তখন তাকে বললাম
উওরটা কি। পরে সে বলে দিল। কিন্তু ও
জানার পরও কেন বললো না তা বুঝতে
পারলাম না।
-আমি বললাম তার সামনে গিয়ে –
-মিলন বলল আপনি জানতেন উওরটা তাও
বলেন নি কেন?
– মনে ছিল না।
– মনে ছিলনা নাকি অন্য কিছু।
– কোন কথা নাই।
-কিছু বলছেন না কেন?
-এমনি।
– আচ্ছা তাই।
-হুম।
-আমি চশমাটা খুলে নিলাম।
-আমার চশমা দিন বলছি।
-দিবনা।কি করবেন আপনি?
-আমি সব কিছু ঝাপসা দেখছি।
-দুবল জায়গা খুজে বললাম -আমি প্রতিদিন
প্রশ্ন করবো সে গুলোর উওর দিবেন।
-না দিলে?
-১৫ মিনিট করে চশমা নিয়ে যাব।
-হুম।
পরের দিন. ..
আচ্ছা প্রাণি মারলে পাপ হয়। আমরা যে মশা
মারি তাতে পাপ হয়না?
– ভাবতে হবে।
-ওকে ভাবেন তাহলে । আমি আসি।
একটু পর গিয়ে দেখি সেখানে নেই। পরে
অনেক খুজার পর পেলাম লাইব্রেরিতে।
অনেক বই নিয়ে বসে বসে একটার পর
আরেকটা পড়তাছে ।
কাছে গিয়ে বললাম হয়েছে উওর দিন?
তখন কি সব বলত। আমি বললাম হয়নি। তাই
চশমা খুলে নিলাম ১৫ মিনিটের জন্য।শুধু মাএ
ওই চোখ দুটো দেখায় জন্য।
এই রকম আরও নানা প্রশ্ন করতাম. ..এই যেমন
মেয়েরা আগে কেন প্রপোজ করে না। তার
কথায় যুক্তি থাকলেও আমি বলতাম হয়নি। শুধু
কারন ওই একটাই। সারাদিনের মধ্যে শ্রেষ্ট
সময় হচ্ছে ওই ১৫ মিনিট সময়। এভাবেই দিন
কাটতে লাগল।
আজ ৪ দিন হয়ে গেল মি.স্বল্পভাষী ক্লাসে
আসে না। যাকে একদিন না দেখলে মন ভালো
থাকে না আর ৪দিন হয়ে গেল তাকে দেখি
না।
ক্লাস শেষের দিকে এমন সময় তাড়াহুড়া করে
ঢুকলো। মনে এক প্রকার শান্তি বিরাজ
করছে।
ক্লাসে আসতেই স্যার তাকে প্রশ্ন করা শুরু
করল -কেন আসনি? কি হয়েছিল।
-প্রতিউওরে – স্যার এর পর থেকে এমন আর
হবে না। এই জন্যই তো ওকে আমি
মি.স্বল্পভাষী বলে ডাকি। কাউকে কিছু
বলবেনা প্রয়োজনের বেশি কিছু।
৩:৫০ মিনিট ক্লাস শেষ। আমার ইগু বেশি
থাকার কারনে তার সাথে কথা বলতে
যায়নি। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ও
আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে তা খেয়াল ই
করিনি।
-তোমার একটা কাজ করতে হবে।
-বল।
-তুমি তো জানো আমি তোমাকে ছাড়া আর
কারও সাথে তেমন মিশি না। এই চিঠিটা
একটা মেয়ের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
যাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। কি
কাজটা করে দিতে পারবানা।
– ভালোভাবে চিঠিটা রাখলাম ব্যাগে ।
তারপর বললাম -ওই মি. স্বল্পভাষী তুই কিছু
বুঝিস না। আমি তোকে কত ভালোবাসি ।
নাকি বুঝতেই চেষ্টা কররিস নাই। আর আমি
তরে সাহায্য করমো। তাও আবার এই বিষয়ে
কোনদিনও না। তারপর চশমা টা খুলে হাতে
নিয়ে হন হন করে চলে আসলাম। এবার বুঝুক
কানা হয়ে থাকতে কেমন লাগে ।
বাসার এসে কান্না শুরু করলাম। যাকে এত
ভালোবাসলাম সে কি না অন্য মেয়েকে
ভালোবাসে এই ভেবেই কান্না আসতেছে।
হঠাৎ মনে পড়ল চিঠিটার কথা। আমাকে বাদ
দিয়ে অন্য মেয়েকে চিঠি দেওয়া। ব্যাগ
থেকে বের করে রাগে ক্ষোভে চুলার দিকে
যেতে লাগলাম চিঠিটাকে পুড়িয়ে দেব
ভাবছি আবার মনে মনে ভাবতে লাগলাম
দেখিতো মি স্বপ্লভাষী কি লিখেছে ।
পড়তে লাগলাম. . ..
ঋদ্ধি,
তুমি কি জান তোমাকে আমার কতটা দরকার।
প্রথম যেদিন দেখেছিলাম আবছা চোঁখে কি
মধুরতা যে আমাকে গ্রাস করেছিল তা বলে
বুঝাতে পারবনা। ক্লাসের পিছনে সিটে
বসতাম কারন জানো?যাতে তোমাকে
ভালোভাবে দেখতে পারি। তোমাকে যেদিন
স্যার দাড় করিয়ে রাখছিল সেদিন আমি এক
কোণে বসে ছিলাম । ভালোভাবে দেখতে
পারছিলাম না। তাই দাড়িয়ে তোমাকে
দেখছিলাম। ভালোলাগা মানুষকে একদিক
থেকে দেখা যে কি মজা তা বলে বুঝাতে
পারবনা সেইজন্য উওর জানা পরও বলিনি। ১৫
মিনিটের জন্য যখন চশমা খুলে নিতে। ওই
মিনিটগুলোই তোমাকে আবছা নয়নে
দেখতাম। আমি কম কথা বলি দেখে তুমি
আমাকে মি.স্বল্পভাষী বলে ডাকতে। তুমি
কি জানো? নামটা আমার খারাপ লাগেনি
বরং ভালোই লেগেছে। তুমি কি এই
মি.স্বল্পভাষী সারা জীবনের সাথী হবে?
চিঠিটা পড়ার পর দেখি আমার চোঁখে পানি
চলে এসেছে। আরে আসি কান্না করতেছি
কেন। আমার তো খুশি হওয়ার কথা। তারপর
বুঝলাম সুখেও মানুষ কাঁদে। যেমনটা আমি
করতেছি।
পড়ে মনে করলাম মি. স্বপ্লভাষীর তো আমি
চশমাটা নিয়ে এসেছি । ও তো চশমা ছাড়া
চলতে পারে না । গাড়ি নিয়ে চললাম। গিয়ে
দেখি যা ভাবছি তাই ওই খানেই বসে আছে।
-কি এখনো এখনে বসে আছেন?
-হুম।
-কেন?
-তুমি আসবে বলে ।
– এভাবে তাকিয়ে কি দেখ?
– আবছা চোখের স্পষ্ট প্রতিবিম্ব।
-এভাবে আমাকে ভালো বাসবে তো।
-হুম।
-এইহুম কি?এই একদম হুম হুম করবানা?
-হুম।
-আবার..!
প্রথম প্রথম ভাবতাম কেমন এক ছেলের সাথে
প্রেম করলাম অনেক গুলো কথা বলতাম সে
বলতো একটা দুইটা। প্রথমে বিরক্ত হলেও এখন
ভালোই লাগে। বলুক না সে কম কথা, থাকুক
না সে বোকা, থাকুক না সে একটু অগোছালো
। এগুলোই এখন আমার সুখের বিষয়বস্তু।