আমার আপনাকেই চাই (পর্ব ১)

আমার আপনাকেই চাই (পর্ব ১)
ফাহাদ বাসর ঘরে ঢুকেই দেখে ইরা মনের সুখে সিগারেট টানছে।দেখেই ফাহাদের মাথায় রক্ত উঠে গেল,
-আপনার সাহস কত বড় আমার বেডরুমে বসে সিগারেট খাচ্ছেন?আর নতুন বউ হয়ে এগুলো করছেন লজ্জা করে না? ইরা খুবই উদাস ভাবে বলল, না করে না কোন ভদ্র ফ্যামিলির মেয়ে সিগারেট খায়না ।আপনি আসলেই একটা অসভ্য টাইপের মেয়ে। ইরা ফাহাদের কথায় খুব উৎসাহিত হয়ে বলল, তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন।ডিভোর্স দিয়ে দিন তাহলেই তো হয়ে যায়।
এই কথা শুনে ফাহাদ চুপ হয়ে গেল।আর কথা বাড়াল না ইরার সাথে।এভাবে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বিয়ে করেনি সে,করেছে অন্য কারনে।চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে গেল।
ইরা ভাবছে ফাহাদ এতটা লোভী কখনও ভাবেনি সে।দেখে সহজ সরল মনে হয়েছিল তাই বিশ্বাস করে তার অসুস্থতার কথা বলেছিল।কিন্তু কি করল এই ছেলে ?সেটা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করল ওকে।তবুও তিনদিনের মধ্যে।বুঝতে অসুবিধে হয়নি ইরার যে ফাহাদ এটা কেন করেছে।করেছে সম্পত্তির লোভে।বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ইরা।
ও মরে গেলে ফাহাদ সব কিছু খুব সহজেই হাত করতে পারবে।বিশ্বাস করে এত বড় ধোঁকা খেল ভেবে কস্ট লাগছে।বাবা মাকে জানাতে পারত সব,কিন্তু লাভ হত না,উল্টো বাবা মায়ের কস্ট বাড়ত।নাহ এই ছেলেকে নিজেই হ্যান্ডেল করবে সে।এমন কিছু করতে হবে যাতে করে এই ছেলে নিজেই ওকে ছাড়তে বাধ্য হয়।
ফাহাদ ফ্রেশ হয়ে আসার পর বলল, আমার খুব ঘুম পেয়েছে।সরুন শোব। মানে কি?আপনি ভাবলেন কি করে যে আপনাকে আমার সাথে শুতে দিব? একটা বালিস মেঝেতে ঢিল মেরে ফেলে দিয়ে ইরা বলল, যান ওখানেই শোন আপনি।আমার ধারে কাছেও আসার চেষ্টা করবেন না বলে দিচ্ছি।টাকার লোভে বিয়ে করেছেন ভাল কথা,আমাকে জ্বালাবেন না একদম,সাবধান।
ইরার কনফিডেন্স ছিল যে এই ছেলের সম্পত্তির লোভ থাকলে ও মরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওকে তেমন ঘাটাবে না।কোন কিছুতে জোর জবরদস্তিও করবে না।হলও তাই।ফাহাদ চুপচাপ আলমিরা থেকে একটা চাদর বের করে মেঝেতে বিছিয়ে শুয়ে পড়ল।
ফাহাদ ভাবছে ইরার কথা।বিয়েতে একদম মত ছিল না ওর।ইরা দেখতে ভালই কিন্তু মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে বলে মনে হয়েছিল প্রথম পরিচয়ে।তাদের বাবা মা দুজনকেই ট্যুরের বাহানায় কক্সবাজার নিয়ে গিয়েছিল।প্রথম দিনেই মিথ্যা বলে ফাহাদকে নিয়ে রাতে জঙ্গলে গিয়েছিল ইরা তাবু খাটিয়ে থাকবে বলে।তার নাকি এডভেঞ্চার পছন্দ।
সে এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা ছিল।তখন প্রতি মুহূর্তে ইচ্ছা করছিল মেয়েটাকে একটা চড় লাগাতে কিন্তু সেই রাতে ইরা কথায় কথায় বলে ফেলেছিল তার অতিরিক্ত হাসিখুশি থাকার কারণটা। মেয়েটা অসুস্থ,ওর কাজ কর্ম যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন সে রাগ কন্ট্রোল করার ট্রাই করবে।ইরাকে আর স্ট্রেস দিবেনা।ইরা বিছানায় শুয়ে বালিসে মুখ বুজে কাঁদছিল জীবনের শেষ কটা দিন এভাবে কাটাতে হবে ভাবেনি সে।
ভেবেছিল বাবা মাকে যতটা সম্ভব বেশি সময় দিবে।কিন্তু তা আর হলোনা।এই ধোঁকাবাজ ছেলেটার সাথে বাকি দিনগুলো কাটাতে হবে ।বাবা মা তো জানেও না যে সে মাথায় টিউমার নিয়ে ঘুরছে। বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ৫% ।একথা বাবা মা কে জানালেই বা কি হত?বাকি দিনগুলোও কষ্টে কাটাতেন উনারা।ভাবতে ভাবতে আপনা থেকেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ইরার।
সকালে দরজায় মায়ের ডাকে ঘুম ভাংল ফাহাদের।সে তারাতারি মেঝে থেকে বিছানা সরিয়ে হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলল। কিরে নটা বাজে।বৌমা কি ঘুমাচ্ছে এখনও? হুম কাল অনেক ধকল গেছে তো। মা হেসে ফেললেন।ডেকে তুল বৌমাকে।তোর বাবা নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছে।বলে চলে গেলেন ফাহাদের মা।
ফাহাদ ইরা কে ডাকল, এই যে উঠুন।মা নাস্তার জন্য ডাকছে। ইরা ঘুম জড়ানো গলায় বলল, এখন নাস্তা খাবনা।আমাকে বেড টী দিতে বলুন। দেখুন আপনি বাড়ির নতুন বউ।প্রথম দিনই এরকম করলে মা অনেক কস্ট পাবে ইরা ঝাড়ি মেরে বলল, যান তো ।ঘুমাতে দিন আমাকে। ফাহাদ খেয়াল করেনি মা আবার রুমে এসেছেন ফাহাদ চা খাবে কিনা জানতে।এসে সবই শুনলেন।হঠাত মায়ের আওয়াজে চমকে তাকাল ফাহাদ।
বউমা না এলে তুই একাই আয় খেতে।ও পরে খেয়ে নিবে।বলে চলে গেলেন। শ্বাশূড়ির গলা শুনে ইরা উঠে বসল।ফাহাদ রেগে গেল, হলো তো ?এখন আপনি খুশি? বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।ইরা ভাবল ফাহাদের বাবা মায়ের সাথে বেয়াদবি করা উচিত হবেনা ।উনাদের তো কোন দোষ নেই।তাছারা ইরার বাবা মা এগুলো শুনলে কস্ট পাবেন।
সে চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে খেতে এল।নাস্তার টেবিলে কেউ কথা বলছে না।বুঝতে পারল তার আচরণে সবাই অষন্তুষ্ট।সেও এসব পাত্তা না দিয়ে খাওয়া শুরু করল।ফাহাদের মা হঠাত বলে উঠলেন, বউমা বাসার কিছু নিয়ম কানুন আছে।আমরা সবাই ঠিক নটায় একসাথে বসে নাস্তা করি।টাইম মত উঠে ফ্রেশ হয়ে ইচলে আসবে।
এর মধ্যেই ইরার মাথায় খুব যন্ত্রণা হতে লাগল।ও দুহাতে মাথা চেপে ধরল।ফাহাদ তারাতারি উঠে গিয়ে পানি খাইয়ে দিল ইরাকে।আপনার শরীর খারাপ।চলুন রুমে গিয়ে রেস্ট নিবেন।হাত ধরে ইরাকে রুমে নিয়ে গেল।এদিকে ফাহাদের মা ভাবছেন উনার কথা শুনে ইরা বিরক্ত হয়ে এই নাটক টা করেছে।ফাহাদের বাবা মা দুজনেই অবাক হয়ে ফাহাদের চলে যাওয়া দেখছে।
যে ছেলে বিয়ের নাম শুনে দৌড়াত সে একদিনে এরকম বউ ভক্ত হয়ে গেল?মেয়েটা কি যাদু করেছে কে জানে।ফাহাদের মা ভাবতে লাগল এই মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিয়ে উনারা কোন ভুল করেননি তো? এদিকে রুমের কাছে এসেই ইরা ঝাপ্টা মেরে সরিয়ে দিল ফাহাদকে। দূরে থাকুন আমার থেকে।বাহানা পেলেই কাছে ঘেঁষার ধান্ধা। আপনার হেল্প করছিলাম শুধু।আপনার সাথে ওভাবে ঘেষার ইচ্ছা আমার কখনই ছিল না। ও তাই?তাহলে বিয়ে করলেন কেন?থাক থাক বলতে হবে না।আমি খুব ভাল করেই জানি কিসের লোভে বিয়ে করেছেন আপনি।আরেকটা কথা আমি মরে গেলেও আমার হেল্প করার দরকার নেই আপনার।ধন্যবাদ।
এটা বলেই ইরা নিজেই আসতে আসতে হেঁটে রুমে চলে গেল।ফাহাদ তাকিয়ে আছে।মেয়েটাকে ভালবাসে না সে অথবা বউ হিসেবেও দেখে না।তাহলে ওকে বিয়ে করল কেন সে?হুম মেয়েটার জন্য কেমন যেন মায়া কাজ করেছিল।ইরাকে ওয়াদা করেছিল যে সে আর কাওকে তার অসুস্থতার কথা জানাবে না।
কিন্তু মেয়েটাকে জেনেশুনে চোখের সামনে এভাবে মরতে দেখতে পারবে না।কিছু একটা করতেই হত।বিয়ে না করলে হেল্প করার সুযোগটা কোন ভাবেই পেত না।মেয়েটাকে মরতে দিবে না সে,এটা শুধু জানে ফাহাদ ওয়াশরুমে শেভ করছিল।হঠাত করেই ইরা ঢুকে গেল ওয়াশরুমে।চমকে ফিরে তাকাতে গিয়ে ফাহাদের গাল অনেকখানি কেটে গেল।
মেয়েটার মাথায় তিল পরিমাণ ঘিলুও নেই।ফাহাদ চেঁচিয়ে উঠল, আমি ওয়াশরুমে আছি জেনেও এভাবে নক না করে ঢুকে গেলেন কেন?মেনার্স বলতে কি কিছু নেই আপনার? না নেই।ওয়াশরুমের দরজা খোলা ছিল।বুঝলাম সেরকম কিছু করছেন না।তাই ঢুকে গেলাম।এখন বেরুন আমি গোসল করব।
চলবে…..
আপনাদের সারা পেলে গল্পের পরবর্তী অংশ দিব। চাইলে আমাকে ফলো / রিকুয়েস্ট দিয়ে রাখতে পারেন। আপনাদের সারা পেলে আগামীকাল গল্পের পরবর্তী পর্ব দিব। সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
লেখকঃ ক্ষুদ্র লেখক